নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অবিলম্বে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র ৪ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা।

এ সময়ে বক্তারা ‘খাদ্য অধিকার আইন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবনা প্রণয়ন কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেন।

ঢাকার সিরডাপ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) ইকো কোআপারেশন-এর সিভিক এনগেজমেন্ট এলায়েন্স প্রোগ্রাম ও ক্রিশ্চিয়ান-এইড এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্য ও খাদ্য অধিকার আইনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে তারা এসব কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে জানানো হয়, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও দেশের মোট জনসংখ্যার ১২.৯ শতাংশ অতিদরিদ্র ২ কোটি এবং দরিদ্র ২ কোটিসহ মোট ৪ কোটি মানুষ (২০১৬ সালের বিবিএস-এর তথ্যানুযায়ী), যার অর্ধেক বেশি কম ও অপর অর্ধেক অল্প কম খেতে পায়।

প্রধানত এ জনগোষ্ঠীই দরিদ্র বলে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। অপরদিকে, সমাজে আয়-বৈষম্যের কারনে শীর্ষ ১০ ভাগ ধনী পরিবারের আয় মোট জাতীয় আয়ের ৩৮ শতাংশ এবং নিম্নের অবস্থানকারী ১০ ভাগ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ১ শতাংশের মালিক।

এ পরিস্থিতি দেশে সকল মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রতিষ্ঠার বিষয়কে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে ‘খাদ্য অধিকার আইন’প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র ৪ কোটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

 ‘খাদ্য অধিকার  বাংলাদেশ’ ও ‘পিকেএসএফ’-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতর-এর মহাপরিচালক কাজী রওশন আক্তার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এতে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ইকো কোআপারেশন-এর হেড অব প্রোগ্রাম আবুল কালাম আজাদ।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। এছাড়া মুক্ত আলোচনায় জামাল হোসেন, বদরুল আলম, জেমস মৃদুল হালদার, মাহবুবুল হক, সীমান্ত সিরাজ, আব্দুর রহমান, আতাউর রহমান মিটন, শাহীন অক্তার ডলিসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণ।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম ‘খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে একমত পোষণ করে এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে নেটওয়ার্কের প্রতিনিধদের বৈঠকের বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি আরো বলেন, দলীয়করনের উর্ধ্বে এবং সততার সাথে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসবে।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে আলোকপাত করেন মহাপরিচালক কাজী রওশন আক্তার।

তিনি বলেন, নারীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে খাদ্য ও বিভিন্ন ভাতাসহ তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের উপর জোর দেয়া হচ্ছে। এতে হ্রাস পাচ্ছে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার।

জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যেই জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতেও উত্তরণ ঘটেছে।

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, অধিকার নিশ্চিতকরনে আইনি স্বীকৃতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য নীতির পাশাপাশি খাদ্য অধিকারের আইন খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিতকরণে জোরালো ভূমিকা রাখবে। খাদ্য অধিকার আইন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাবনা প্রণয়ন কমিটি ও নির্বাচনী ইশতেহারে খাদ্য অধিকার আইনের বিষয়টি অন্তর্ভূক্তির দাবীতে তিনি সংহতি প্রকাশ করেন।

আবুল কালাম আজাদ দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন দপ্তরের মাঝে সমন্বয়, কৃষি ও বাজারজাতকরন ব্যবস্থা, কৃষিজাতপণ্যের ন্যায্যমূল্য ও খাদ্য অপচয় রোধে খাদ্য অধিকার আইনের প্রয়োনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আইন ছাড়া নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হলে প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। যা আইন ছাড়া সম্ভব নয় এবং পাশাপাশি দরকার যথাযথ বাস্তবায়ন।

প্রবন্ধ উপস্থাপনে মহসিন আলী  খাদ্য অধিকার আইনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলেন, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ‘খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার ক্যাম্পেইন’ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

এ ক্যাম্পেইনের অধীনে নির্বাচনের পূর্বে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নে সমাজের সর্বস্তরের ৩০ লক্ষের বেশি মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর এই স্বাক্ষর সম্বলিত ‘স্মারকলিপি প্রদান’এবং সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘খাদ্য অধিকার আইন’এর বিষয়ে অঙ্গীকারের দাবিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

এ প্রেক্ষাপটে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে নিচের সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর পক্ষে কানিজ ফাতেমা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।