নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারিরা ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করে বিক্রি করছেন ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি হিসেবে। গতকালের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় অঞ্চলে ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দরে। অথচ একই মুরগি বাজারে বসে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।

ফলে ৩০ দিন পরিশ্রমের পর লাভ তো দুরের কথা লোকসান দিচ্ছেন কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। সেখানে ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করছেন!

খামারি পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে কমতে ১১০ থেকে ১১২ টাকায় এসে নেমেছে। দেশের প্রায় সবর্ত্রই খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে গড়ে প্রায় ১৫০-১৬০ টাকায়। উৎপাদিত পণ্যের দাম ক্রমাগত দাম কমতে থাকায় খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন খামারিরা। দেশের মোট খামারির প্রায় অর্ধেক বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স বাংলাদেশ(পিপিবি) এর গতকাল ২৯ নভেম্বর শুক্রবারের দৈনিক পাইকারি বাজারদর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সারাদেশে গড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১১৭ টাকা দরে চট্টগ্রামে, সিলেটে ও টাঙ্গাইলে ১২০ টাকা, ময়মনসিংহে ১২০ টাকা, ফরিদপুরে ১১৫ টাকা, নোয়াখালীতে ১১৬ টাকা। তবে খুচরা বাজারে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি।

খামারে মুরগি উৎপাদন করে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারছেন না খামারিরা। কিন্তু বাজারে বসে দু-এক ঘন্টার মধ্যে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা- এমন দাবি করছেন খামারিরা।

শফিকুল ইসলাম নামের এক খামারি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার গত ৩ বছরে ১৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ব্রয়লার পালন ছেড়েছি। একটা ৯ লাখ টাকার শেড পড়ে আছে। পোল্ট্রি সেক্টর ঝুঁকির সম্মুখীন। বলা যায় খামারিরা পথে বসেছেন। ডিমের উৎপাদন খরচ এখন ১০ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৫০ টাকা পিস কিনে ৯০ টাকা কেজিতে খরচ করে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

আজ রোববারের (২৭ নভেম্বর) পোল্ট্রির ডিম মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম

আজ শনিবারের (২৬ নভেম্বর) পোল্ট্রির ডিম মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম

শুক্রবারের (২৫ নভেম্বর) পোল্ট্রির মুরগি, ডিম ও বাচ্চার পাইকারি দাম

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) পোল্ট্রির ডিম মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম

ব্রয়লার খামারি সাদাত হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, গত দুমাস ব্রয়লার মুরগির দাম ভালো থাকার কারণে একযোগে খামারিরা আবার বাচ্চা তোলা শুরু করেছেন। আর যেহেতু ব্রয়লার মুরগি ৩০ থেকে ৩২ দিনের মধ্যে হয়ে যায় সেহেতু অনেকেই আগ্রহ করেছেন। এখন সবার মুরগি বড় হয়ে গেছে। একসাথে বাজারে এনেছেন। দাম কমে গেছে।

এই খামারি জানান, এককেজি ব্রয়লার করতে হিসেব করলে, ৫০ টাকা পিস বাচ্চা কিনে প্রতিকেজিকে খাবার খাওয়াতে হয় কমপক্ষে ৭০ টাকার। ভ্যাকসিন ও আরোও খরচ হিসেবে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ করতে হয় ১৩৫ টাকার মতো। আর এখন বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতিকেজিতে হিসেব করে কোন লাভ নাই। খামারি পর্যায়ে ১২০-১২৫ টাকা দাম, খুচরা বাজারে ১৫০ টাকা কেজি। আমরা যা লাভ করতে পারিনা সারামাস খেটে ব্যবসায়ীক দালালরা তা এক দু ঘন্টার মধ্যে করে নেয়।

রাজশাহীর মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা দরে বেঁচা হচ্ছে। ব্রয়লারের আমদানী বেড়েছে। এখন মুরগির খামারিরা বিপদে আছে। দাম কমতে থাকলে রাতের মধ্যে ১০ টাকা কেজিতে নাই হয়ে যায় ফলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ব্রয়লার মুরগির দাম কমছে কারণ বাজারে ব্রয়লার মুরগি একটু আমদানি বেশি। সোনালি ২৬০ টাকা, কক মুরগি ২৬০ টাকা, হাঁস ৪৫০ টাকা, রাজহাঁস ৪৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসলে দাম কমতে পারে। আমাদের দেশের সিন্ডিকেট সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৪-৫ দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ৩৫’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ। বহুবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। কোন কাজ হয়না। পোল্ট্রি ফিডের বর্তমান দাম খামার চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ডিমের দাম উৎপাদন খরচের তুলনার কম। প্রতিপিস ডিমে ৩ টাকা লোকসান টাকা দিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্যের দাম কমানো, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সটিক বাজার নির্ধারণ সবকিছু এখন করা জরুরি প্রয়োজন। তা না হলে পোল্ট্রি খাত টিকবে না।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বি.পি.কে.আর.জে.পি) এর সভাপতি মহসিন আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, উৎপাদন বাড়ার কারনে দাম কমেছে। বিভিন্ন কর্পোরেট /বড় বড় কোম্পানি রেডি মুরগি উৎপাদন করার কারণে প্রান্তিক খামারিরা দাম লোকসান দিয়ে মুরগি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ডিম উৎপাদনে খাদ্যসহ যেসব উপকরণ ব্যবহার হয় সেগুলোর দাম কিন্তু কমে নাই। অথচ ডিম-মুরগির পাইকারি দাম অনেক কমে গেছে। বর্তমানে বছরের সর্বনিম্ন দামে ডিম-মুরগি বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম বিষয়ে তিনি বলেন, ডিম প্রতি দুই থেকে আড়াই টাকার ক্ষতির মুখে ডিম উৎপাদনকারীরা। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। আর তৃণমূলের খামারিরা ঝড়ে পরলে এক সময়ে ডিমের দাম বর্তমান দামের চেয়ে দ্বিগুণ দাম হবে। অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ টাকায় একটা ডিম কিনে খেতে হবে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ