ডাঃ মোঃ শাহ্-আজম খান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  ভাই, ষাঁড়ে লাভ না লোকসান??? গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ১০০ জনে মধ্যে ৯০ জন খামারীই বলবে লোকসান।

ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই এখন গরু/ষাঁড় কিনবেন মোটাতাজাকরণ করার উদ্দেশ্যে। এছাড়াও সারা বছরেই গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প কমবেশি লাভজনক। কিন্তু, বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ খামারীই এই প্রকল্পে অনভিজ্ঞতার কারনে নিজের পুজিঁ হারিয়ে ফেলছেন।

এর অনেক গুলো কারন রয়েছে। আমি সব গুলো কারন নিয়ে আলোচনা করবো না। কিছু কারন আছে যাহা চাইলেই আমি বা আপনি বন্ধ করতে পারবো না। যেমন- বর্ডার দিয়ে গরু প্রবেশ আপনি/আমি চাইলেই বন্ধ করতে পারবেন না।
তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারন নিয়ে আলোচনা করছি-

১) পরিকল্পনার অভাবঃ গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প বলতে আমরা কি বুজি? স্বল্প সময়ে (৩ থেকে ৪ মাস) অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার ও অধিক যত্নের মাধ্যমে দ্রুত মাংস বৃদ্ধির প্রকল্পকে আমরা গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প বুজি। এখানে প্রকল্পের মেয়াদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। প্রকল্পের মেয়াদের সাথে গরুর বয়স ও অন্যান্য অনেক বিষয় জড়িত থাকে।

২) চোখের মাপে গরু ক্রয়ঃ আপনি এই ব্যবসায় নতুন হলে অবশ্যই চোখের মাপে গরু ক্রয় করা বন্ধ করুন। সম্ভব হলে ওজন করে (মাংসের দামে) গরু ক্রয় করুন। বিক্রির সময় অনুরূপ ভাবে গরু ওজন করে মাংস বিবেচনায় গরু বিক্রি করুন। বর্তমানে মাংসের মুল্য কেজি প্রতি স্থানভেদে ৫২০/- থেকে ৫৮০/- টাকা। ওজন করে গরু কিনলে আপনি বুজতে পারবেন আপনি কত টাকা খরচ করে কত কেজি মাংস উৎপাদন করলেন। যার ফলে খুব সহজেই আপনি খরচ ও লাভ-ক্ষতি (Cost benefit Analysis) বুজতে পারবেন।

৩) গরুর বয়স ও জাতঃ দেশি ষাঁড়ের ক্ষেত্রে- দেশি গরু মোটাতাজাকরণের জন্য বয়স দুই দাতঁ বা দুই বছর হলো আদর্শ। এ সময় পরিকল্পিত ফিড ম্যানেজমেন্ট দিয়ে দ্রুত মাংস উৎপাদন করা সহজ হয়। ক্রস জাত বা উচ্চ মাংস উৎপাদন জাতের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৪ মাস হওয়া জরুরী। তবে কুরবানি উপলক্ষে প্রকল্প হলে দুই বছরের গরু সব থেকে উপযোগী।

৪) যাছাই-বাছাই না করেই অন্যের বুদ্ধি গ্রহণ করাঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উদাহরণ দিয়েই এই কথাটির কারন তুলে ধরবো। অন্যের বুদ্ধি শুনে অনেকেই গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে ব্রয়লারের খাবার ব্যবহার করে থাকেন। যাহা একটি ভুল প্রক্রিয়া। এর কারনে অনেক খামারীই অপ্রয়োজনীয় খাবারের পিছনে অনেক বেশি টাকা খরচ করে ফেলে। ব্রয়লার ফিড গরুতে ক্ষতিকর।

৫)খাবার ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্যঃ গরুর সারাদিনের বরাদ্দকৃত খাবার দুই (২) বার না দিয়ে কমপক্ষে তিন (৩) বার ভাগ করে দেওয়া। এতে খাদ্য গ্রহন হার ও খাদ্য পরিপাক হার দুটোই ভাল হবে। ১০০ কেজি লাইভ ওজন অনুপাতে ৩% ড্রাইমেটার নিশ্চিত করতে হবে। সুষম দানাদার খাবার বা প্যাকেট ফিড প্রতি ৭৫ কেজি লাইভ বডি ওজন অনুপাতে ১ কেজি প্যাকেট ফিড নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সবুজ কাচাঁ ঘাস বা সাইলেজ থাকাটা জরুরী।

যদি সবুজ কাচাঁ ঘাস বা সাইলেজ এর যোগান না থাকে তাহলে প্রতি ৬০ কেজি লাইভ বডি ওজনের জন্য ১ কেজি প্যাকেট ফিড নিশ্চিত করতে হবে। প্যাকেট ফিড শুকনো খাওয়ানো উত্তম। এতে খাবারের শোষণ ও হজমে সহায়তা করে। পরিষ্কার পানি সব সময়ই পরিবেশন করতে হবে। গরমে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ বার গোসল করাতে হবে।

মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য ষাঁড় গরু বাছাই করা খবই গুরুত্বপূর্ণ; কারন বকনা/গাভী গরুর তুলনায় ষাঁড় গরুতে মাংস উৎপাদনের হার তুলনামুলক ভাবে অনেক বেশি হয়। ছোট ছোট বাছুর ক্রয় করা গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য বড় ধরনের ঝুকি।

গরু ক্রয়ের পর ৫-৭ দিনের মধ্যে কৃমিমুক্তকরন করাটা খুবই জরুরী। সাথে হজমক্রিয়া যাহাতে ঠিক থাকে তাই কৃমিনাশক প্রয়োগের ২/৩ দিন পর লিভারটনিক ও প্রোবায়োটিক ব্যাবহার করবেন। পাশাপাশি একজন অভিজ্ঞ ভেট-এর সাথে পরামর্শ করাটাও খুবই জরুরী।

লেখক:  ডাঃ মোঃ শাহ্-আজম খান, সিনিয়র কাস্টমার সার্ভিস অফিসার (ক্যাটল বিভাগ) সিরাজগন্জ রিজিওন। নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড। মোবা: ০১৭০৮-৪২৯৫৬০

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ