ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশে ব্রি-২৯ জাতের ধানের সঙ্গে ভুট্টার বীজ মিশিয়ে গোল্ডেন রাইস নামে একটি খাদ্য শস্যের উদ্ভাবন করা হয়েছে। তবে এই ধান নিয়ে বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এটি পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অন্যদিকে গোল্ডেন রাইস নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন- নতুন এই ফসল দরিদ্র মানুষের শরীরে ভিটামিন এ-র ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।

গোল্ডেন রাইস: সাধারণত ভাতে রান্না করার জন্য আমরা যে চাল খাই তার রঙ সাদা হয়ে থাকে। তবে এই চালের রং হবে হলুদ রঙের। এই চাল জেনেটিক্যালি মডিফাইড শস্য। বাংলাদেশে ব্রি-২৯ জাতের ধানের সঙ্গে ভুট্টার বীজ মিশিয়ে গোল্ডেন রাইস নামে খাদ্য শস্যের উদ্ভাবন করা হয়েছে।

ভুট্টা অথবা ড্যাফোডিল ফুল থেকে নেয়া ‘ফাইটোন সিনথেজ’ জিন ও মাটির এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে নেয়া ‘ক্যারোটিন ডিস্যাচুরেজ’ জিন ধানের জিনোমে প্রবেশ করিয়ে এই চাল প্রস্তুন করা হয়। ফলে ধানের ভেতর ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন, যা ভিটামিন এ-র পূর্বের অবস্থা) তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: ধানের ভুয়াঝুল রোগ দমনে করণীয়

নতুন এই জাতের ধানটি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মার্কিন দাতব্য সংস্থা বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

গোল্ডেন রাইস নিয়ে পরিবেশ কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের ধান চাষ করার মতো পরিবেশ এখনো বাংলাদেশে হয়নি। এই ধান চাষ করলে পরিবেশ ও অন্যান্য ফসলের ওপর যে প্রভাব পড়বে তা যাচাই করে দেখা হয়নি। ফসলটি ফলন করতে হলে অবশ্যই বায়োসেফটির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

তাদের দাবি, জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফসলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত অনেক ঝুঁকি রয়েছে। এই বিষয়গুলো গবেষণা করে দেখা হয়নি। ভিটামিন ‘এ’ অনেক খাবারে পাওয়া যায়। তাই এই ফসলের প্রয়োজন পড়ে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস জানিয়েছেন, এই চাল গর্ভবতী নারী ও শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি পূরণ করবে। সরকারি ক্যাম্পেইনেও যাদের কাছে ভিটামিন ‘এ’ পৌঁছানো সমস্যা, তাদের জন্য ভালো হবে।

ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়ার মতো বাংলাদেশে ভিটামিন ‘এ’-র অভাব পূরণ করতে হবে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়ার মতো বাংলাদেশে ভিটামিন ‘এ’-র অভাব পূরণ করতে ভাতের সঙ্গে এই ভিটামিনটি শরীরে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এর ফলে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ সহজ হবে।

আরও পড়ুন: ভারতে আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্র্যান রাইস অয়েল রফতানি

তবে ধানটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং বাংলাদেশে সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা শুরু হবে বলেও জানান তিনি। উবিনীগের মতো সংস্থা এ ধরনের জিন পরিবর্তন করা ফসলের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন। উবিনীগের প্রধান ফরিদা আক্তার বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে জিএম ফসলের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে। বাংলাদেশ এই ফসলে যেন কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় তার জন্য এই ধান চাষ করার আগে ফসলটি পরীক্ষা করা জরুরি।
তবে এ ধরনের ফসলের ক্ষেত্রে যেভাবে পরীক্ষা করা উচিত তা পরিবেশ মন্ত্রণালয় যথাযথ করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গোল্ডেন রাইস মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না খারাপ শিরোনামে লেখাটির তথ্য বিবিসি বাংলা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি