নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাছের ঘেরের পাড়ে বাঁশ ও নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি সেই মাচাতে ঝুলছে মরুর ফল রকমেলন। দীর্ঘদিন ধরেই খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামের দুই ভাই ইলিয়াস মোল্লা ও আফজাল মোল্লা এই ফলের চাষ করেছেন। একইসাথে অসময়ের তরমুজ চাষও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।

তাঁদের এক ছেলে মালয়েশিয়ায় থাকে। তার কথা অনুযায়ী ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় পরিক্ষামূলক ঘেরের আইলে রকমেলন চাষে সফলতা এসেছে। ফল এখন পাকতে শুরু করেছে। স্থানীয় এক সুপারশপে পাইকারিতে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে কিনতে চেয়েছে বলে জানান চাষি আফজাল মোল্লা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, মরুপ্রধান দেশের জনপ্রিয় ফল রকমেলন। আরব অঞ্চলের মানুষ একে সাম্মাম নামেই জানে। এ ছাড়া খরবুজ, খরমুজ, কেন্টালোপ, সুইট মেলন, নেটেড মেলন নামেও ফলটি বিভিন্ন দেশে পরিচিত। এই বিদেশি ফলের কয়েক রকম জাত আছে। ফলটির খোসা বেশ পুরু হওয়ায় সংরক্ষণ ও পরিবহনে সুবিধা রয়েছে।

ঘের টলটলে পানিতে ভরা। এর আইলের ধার দিয়ে বানানো হয়েছে মাচা। নানা জাতের অসংখ্য তরমুজ। সেগুলো নেটের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে রাখা। এক পাড়ের একটা অংশজুড়ে তরমুজের মতো মাচায় ঝুলছে রকমেলন। কুমড়াগাছের মতো লতানো গাছ। দুই ভাই পানিতে নেমে মাচা উঁচু করে দিচ্ছেন। সঙ্গে চলছে অন্যান্য পরিচর্যা।

ইলিয়াসদের ঘেরের পাড়ে দুই ধরনের রকমেলন হয়েছে। একটির গায়ে হলুদ মসৃণ খোসা। খানিকটা পেঁপের মতো। আর অন্যটির খোসা খসখসে, রং হালকা বাদামি ধূসর। বড় বাতাবিলেবু বা ছোট গোল কুমড়ার আকারের। দুটি জাতের ফলের ভেতরটা অনুজ্জ্বল কমলা বর্ণের। ভেতর অনেকটা বাঙির মতো। তবে দুটি ফলই খেতে খুবই মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত।

চাষি আফজাল মোল্লা বলেন, নিজেদের ও বর্গা নিয়ে কয়েক বছর ধরে তাঁরা ঘেরের পাড়ে অসময়ের তরমুজ লাগাচ্ছেন। তাঁদের এক সন্তান মালয়েশিয়া থাকেন। তাঁর কথায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে তরমুজের পাশাপাশি সাম্মাম লাগানোর চেষ্টা করেছেন। ঘেরের পাড়ে হয় কি না, তা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১০ শতক জায়গায় বীজ পুঁতেছিলেন জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ফলের তেমন একটা রোগবালাই নেই। গাছে সামান্য সার ও কীটনাশক দিতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঘেরের পাড়ে হওয়ায় সেচের ঝামেলাও তেমন নেই। লাগানোর মাসখানেক পরেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটা গাছে পাঁচ-সাতটা করে ফল আসে। সব মিলিয়ে ৬০-৬২ দিনের মধ্যে ফল একবারে পরিপক্ব হয়েছে। হলুদ জাতের ফল দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের আর খসখসে গোল জাতের ফলটা হয়েছে তিন থেকে চার কেজি ওজনের। খুলনার আড়তে ফলটির নমুনা দেখিয়েছেন। সেখানে কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকা দিতে চেয়েছে।

ঘেরের আইলে প্রথমবারের মতো বিদেশি এ ফল উৎপাদনের খবর পেয়ে দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকেরা। কেউ কেউ ভবিষ্যতে নতুন জাতের এ রসালো ফল উৎপাদনের জন্য পরামর্শও নিচ্ছেন।

চাষি বাবলু গাজী বলেন, ‘আমি ঘেরের আইলে বিভিন্ন সবজি ও তরমুজ লাগিয়েছি। আমাদের অঞ্চলে ঘেরের পাড়ে লাগানো নতুন ফলটি কেমন হয়েছে, তা দেখতে এসেছি। বিদেশি এই ফল দারুণ হয়েছে। আগামী মৌসুমে অন্তত এক একর জায়গায় এই ফল চাষ করব।’

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, রকমেলন বা সাম্মাম ফলটি দেশের বেশ কয়েকটি এলাকার সমতল ভূমিতে চাষ হচ্ছে। তবে খুলনার মতো লবণাক্ত মাটিতে ঘেরের আইলে প্রথম এই ফল চাষে সফলতা দেখা গেছে। ডুমুরিয়ার সবজি এখন ইউরোপে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয় এই ফলও রপ্তানির বড় সুযোগ আছে। আগামী মৌসুমে এর চাষ এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ