মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আমের

ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি মৌসুমে সংগ্রহকৃত আমের বহুবিধ সমস্যা, সম্ভাব্য কারণসমূহ ও প্রতিকার শিরোনামে শরফ উদ্দিনলেখাটি লিখেছেন ড. মো.শরফ উদ্দিন, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

আম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অথকরী ফসল। লাভজনক হওয়ায় দেশের ২৩ টি জেলায় আমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্প্রসারিত হয়েছে। অন্যান্য ফসল অপেক্ষা লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চাহিদা, বাড়ছে চাষাবাদ এলাকা। এ দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষের পছন্দনীয় ফল। স্বাদে, গন্ধে ও বৈচিত্রময় ব্যবহারের কারণেই আমকে ফলের রাজা বলা হয়।

সকল মৌসুমি ফলের মধ্যে অধিক পছন্দনীয় এই আম। ছোট-বড় সকলেই পছন্দ করেন কাঁচা –পাকা আম। আর এ জন্যেই তো বছরের পর বছর মানুষের অপেক্ষা মধুমাসের জন্য। মে থেকে আগষ্ট মাসের মধ্যেই ৬০ ভাগ ফল বাজারে আসে। তারপরও কদর এতটুকুও কমেনি।

করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবন-যাপন, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুতেই নৈতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু কৃষিবান্ধব সরকারের আম বাজারজাতকরণের পূবেই গৃহীত কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে আমের বাজারে নূন্যতম প্রভাবও ফেলতে পারেনি।

আমের মৌসুম শুরুর পর থেকে এই পর্যন্ত বাজারে আসা প্রত্যেকটি আমে ভাল দাম পেয়েছেন চাষীরা। আম্ফানের কারণে যে পরিমান আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল তার অনেকটিই কাটিয়ে উঠেছেন আমচাষীরা। তবে ভোক্তা পর্যায়ে আমের স্বাদ ও গুণগতমান নিয়ে নানা প্রশ্ন এসেছে এই মৌসুমে। প্রথমত: আম ভালভাবে পাক্ছেনা। বোটা পচে যাচ্ছে সংগ্রহের ২/৩ দিন পর থেকেই। আবার কোন কোন জাতে এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা গেছে তুলনামুলক বেশি। দ্বিতীয়ত: কোন কোন আমের ভিতরে শক্ত ও আমের স্বাদ কম।

আমের গুণগতমান ভাল রাখতে মাটি ও বিরাজমান আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। আমের ফুল ফোটা থেকে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে আবহাওয়া আমের গুণগতমানকে প্রভাবিত করে। মুকুল ফোটা থেকে শুরু করে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক হওয়া ভাল।

আমের মুকুল ফোটার সময় ঘন ঘন বৃষ্টি হলে আমের ফল ধারণ কমে যায় এবং আমে রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা যায়। তবে ফল ধারণ সম্পন্ হলে হালকা বৃষ্টি আমের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। আবার ফল পরিপক্ক হবার ৩০-৪৫ পূর্বের আবহাওয়া শুষ্ক হলে আমের স্বাদ বেড়ে যায়।

এই মৌসুমে গোপালভোগ, খিরসাপাত/হিমসাগার, ল্যাংড়া  এবং হাড়িভাঙ্গা আম সংগ্রহের পূর্বের পুরো সময় বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমগুলো পর্যাপ্ত রৌদ্রউজ্জল আবহাওয়া পাইনি। আম সংগ্রহের পূর্বে বাগান ব্যবস্থাপনাও ঘাটতি ছিল যথেষ্ঠ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আম ৭-১০ দিন দেরীতে পরিপক্ক হয়েছে।

কিন্তু অনেক চাষী গত মৌসুমের অভিজ্ঞতায় এবারও আম সংগ্রহ করেছেন। ফলে আমগুলো ভালভাবে পাকেনি। এছাড়াও ২/৩ দিন বৃষ্টির পর যে দিন বৃষ্টি হয়নি বা দিনের প্রথমভাগ বৃষ্টিমুক্ত ছিল তখন আম পাড়া শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ আম সংগ্রহ করতে করতেই বৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছেন।

ফলে আম পাড়ার পর ভালভাবে শুকানোও সম্ভব হয়নি। এরপর আমগুলোকে প্যাকেট বন্দি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অথবা অন্য পরিবহনের মাধ্যমে দুরদুরান্তে পৌছানো হয়েছে। পরিবহনের সময় কাভার্ড ভ্যান বেশি ব্যবহার করা হয়। এবং ট্রাকে পরিবহনের ক্ষেত্রে ত্রিপল ব্যবহার করা হয়।

ফলে ভিতরে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা দুইই বেড়ে যায়। এর ফলে আমের রোগ যেমন বোটা পচা ও এ্যানথ্রাকনোজ হওয়ার প্রবনতা বেড়ে যায় এবং বাড়িতে রাখার পর দ্রুত পচে যায়। তবে আশার কথা হলো; ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে উৎপাদিত আমে উল্লেখিত সমস্যাগুলি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

প্রকৃতপক্ষে ফ্রুট ব্যাগিং করা আম বৃষ্টির পানিতে ভেজার সম্ভবনাও কম। ফলে বোটা পচা ও এ্যানথ্রাকনোজ রোগও দেরিতে আসে। আম সংগ্রহ করার পর সংগ্রহকাল যত বেশি হবে আমের মিষ্টতা তত বাড়বে। এই মৌসুমে আম পচে যাওয়ার কারণে বেশি দিন ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বৃষ্টিমুক্ত দিন খুজে পাওয়া কষ্ঠকর।

আরও পড়ুন: অনলাইনে বেঁচাকেনা হচ্ছে রাজশাহী-চাঁপাইয়ের আম

ফলে যেদিন আকাশ একটু ভাল মনে হয়েছে সেই দিনই চাষী গাছের কাচা-পরিপক্ক আম এক সাথে সংগ্রহ করেছেন। পরিপক্ক ও অপরিপক্ক আম একসাথে তাড়াহুড়ো করে সংগ্রহ করার ফলে কিছু  আমে টক-মিষ্টিভাব লক্ষ্য করা গেছে। তবে বর্তমানে বৃষ্টির পরিমান একটু কম এবং রৌদ্রউজ্জল আবহাওয়া ফিরে এসেছে ফলে আগামি দিনগুলিতে বাজারে আসা ফজলি, আম্রপালিসহ অন্যান্য জাতগুলি সুস্বাদু হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

করণীয়:

১.      গরম পানিতে আম শোধন করে ভালভাবে শুকিয়ে বাজারজাত করলে বোটা পচা ও এ্যানথ্রাকনোজ রোগের প্রার্দুভাব কমে আসে এবং সংরক্ষণকাল বাড়বে। তবে গরম পানিতে আম শোধনের ব্যবস্থা না থাকলে ২/৩ দিন পর্যাপ্ত রোদ পাওয়ার পর আম সংগ্রহ করতে হবে।

২.      সঠিকভাবে পরিপক্ক আম রৌদ্রাজ্জল আবহাওয়ায় সংগ্রহ করতে হবে। মেঘলা আবহাওয়ায় আম সংগ্রহ করা উচিৎ নয়।

৩.     বৃষ্টির দিনে কোনভাবেই আম সংগ্রহ করা যাবে না।

৪.      আম পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত কাভার্ড ভ্যান, ট্রেনের বঘিতে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫.      বৃষ্টিবহুল এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনে ব্যাগিং প্রযুক্তিটির ব্যবহার করলে আমের গুনগতমান ভাল হবে।

৬.     আমের কস বা আঠা কোন ভাবেই যেন আমের গায়ে না লাগে সেইদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আঠাযুক্ত আম প্যাকিং করলে পরবর্তীতে আমগুলো আরও কালো হয়ে যায় এবং দ্রুত পচে যায়।

চলতি মৌসুমে সংগ্রহকৃত আমের বহুবিধ সমস্যা, সম্ভাব্য কারণসমূহ ও প্রতিকার শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন ড. মো.শরফ উদ্দিন, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বারি, জয়দেবপুর, গাজীপুর।