নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুরসহ অন্যান্য স্থানে হঠাৎ করে চলতি মৌসুমের পাঁকা বোরো ধানের জমিতে কারেন্ট ও নেকব্লাস্ট পোকার হানা। ধান কাটার আগ মহুর্তে কারেন্ট ও নেকব্লাস্ট পোকা হানা দেওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। অথচ ক্ষেতে না গিয়েই জুম সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেই তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা ।

জেলায় এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আর পবা উপজেলা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১১০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরগুলোয় বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বীজতলা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। পুরো মৌসুমই সেচের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারপরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ বলছে, এবার পোকামাকড় ও রোগবালাই তুলনামূলক কম থাকায় বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এজন্য করোনা মহামারীতেও থেমে নেই কৃষকের কাজ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘরে ঘরে চলছে এখন নতুন ধান তোলার উৎসব।

চাষিরা বলছেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগের ঝড়-বৃষ্টির কারণে মাটি ধান পড়ে গেছে। এ জন্য ধান কাটতে সামান্য অসুবিধা হলেও ভালো ফলনে তারা খুশি। বর্তমানে ধানের মণ ১ হাজার টাকা। এবার ধানের ভালো দাম পাবেন বলেও আশাবাদী কৃষকরা।

সদর উপজেলার নারায়নপুর., পাকা ও সুন্দরপুর এলাকার প্রায় চারশত’ বিঘা জমিতে কারেন্ট ও নেক ক্লাস্ট পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। বহুজাতিক ব্যবসায়ী কোম্পানির কীটনাশক দিয়েও ধান নস্ট হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা না নিলে একদিকে ধান কাটতে হবে না চাষিদের এবং অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুণতে হবে।

সরোজমিনে গ্রামের মাঠে ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ধানের শীষ ঠিকই আছে কিন্তু কোন শীষেই ধানের খোসল থাকলেও চাল নেই। শীষের গোড়ায় কালো-সাদা সিটা দাগ আছে। এছাড়াও ধানেও ওই কালো-সাদা সিটা আছে। মূলত: এসব ধানের প্রতিটি থোকায় ধান নেই আছে চিটা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর এলাকার নাইমুল হক জানান, তিনি বিঘা প্রতি সাত হাজার টাকায় জমি লীজ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন। তার মত অনেকের জমিতে ধান কাটতে যেতে হবে না। তালগাছি গ্রামের কৃষক মিন্টুও একই কথা বলেন। মাঠে ১০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ রয়েছে। এরমধ্যে ৩ থেকে ৪ বিঘা জমিতে পোকার আক্রমন হয়েছে। কোন কিছু দিয়েই আক্রমন থামছে না।

আরেক চাষী জানান, এই এলাকায় বেশীরভাগ চাষিরাই জমি লীজ নিয়ে বোরো ধানের অবাদ করে থাকে। চলতি মৌসুমেও বোরো ধানের ভাল ফলনের বুকভরা আশা করলেও ধান কাটার আগ মহুর্তে ধানধ্বংসকারি কারেন্ট পোকা হানা দেওয়ার কারণে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। নানা জাতের ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছেনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, পোকা দমনে মসজিদে মাইকিংসহ পাশে থেকে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চাষিরা সেইমত ব্যবস্থা নেয়ায় এখন পোকার আক্রমন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। মাঠে সার্বক্ষনিক নজর রাখা হচ্ছে। ভর্তুকি দিয়ে আসছে। দেশে এখন সার ও বীজের সংকট নেই। ফলে ধানসহ কৃষি ফসল উৎপাদনে কৃষক সমাজ অনেকটা এগিয়ে চলেছে। আবহাওয়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভালো থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আবহাওয়াগত কারণে কিছু জমিতে পোকার আক্রমন হয়েছে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দেরিতে লাগানো ধানে পোকার আক্রমন হচ্ছে। ফলন কিছুটা কম হলেও কৃষকের লোকসান হবে না। মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রতিদিনই জুম সভায় এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রতিকারের বিষয়টিও কৃষকদের জানানো হচ্ছে মৌসুমের শেষ মহুর্তে কারেট পোকার আক্রমণ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে হয়তো এমন হতো না। তবে চাষিদেরকে আমরা বিভিন্ন প্রকারের কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি উৎপাদনের তেমন ক্ষতি হবেনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রণোদনার আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১২ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মাঠে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। আর ১০-১৫ দিন বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় ভালো ফলন পাবেন।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ