নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে প্রথম বারের মতো বীজের মান পরীক্ষাসহ নানা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্যে গ্রীন হাউজ এর যাত্রা শুরু হয়েছে। আজ রোববার (১৫ জুলাই) এ আধুনিকমানের প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

এই গ্রীনহাউজের সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর গাবতলী মিরপুর খামার এর বীজ ভবনে বীজআলু হিমাগার ও সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করা হয়। সবশেষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজকেরা জানান, প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত গ্রিন হাউজে অমৌসুমে অর্থাৎ সারাবছর ব্যাপি প্লান্টলেট থেকে মিনি টিউবার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। অপরদিকে এ্যরোপনিক্স পদ্ধতিতেও মিনি টিউবার তৈরি করা যাবে।

গ্রিনহাউজে অর্কিড, কলা, জারবেরা ইত্যাদি রেয়ারআপ করা যাবে। শীত মৌসুমে ফসলের বীজ বিতরণের পূর্বেই তার মান পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়াও বিভিন্ন ফসলের হাইব্রিড প্যারেন্ট লাইন উদ্ভাবন করা যাবে। শীত মৌসুমে ফসলের অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল সম্পন্ন করা যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্। সভাপতিত্ব করেন বিএডিসি চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান।

আয়োজকেরা জানান, বর্তমানে বিএডিসি’র ৩০টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার ৭শত মে.টন, তন্মধ্যে মিরপুর হিমাগারে ২ হাজার মে.টন বীজআলু সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে। আগামী ২০২০-২১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মে.টন বীজআলু সংরক্ষণের সুবিধা তৈরি হবে এবং যা জাতীয় চাহিদার ১০ ভাগ। বিএডিসি এর এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের মেয়াদকালে ৩টি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে।

উক্ত ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে প্লান্টলেট এবং তা থেকে মিনি টিউবার, ব্রিডার, ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজআলু উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করছে।

এ প্রক্রিয়ায় বিএডিসি বীজআলু আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৯-১০ হতে এ যাবৎ ৩০ লক্ষ প্লান্টলেট উৎপাদন করেছে এবং তা থেকে মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদন ও সরবরাহ করায় বিএডিসি গত তিন বছর যাবৎ বীজআলু আমদানি শূন্যের কোটায় পৌঁছে দিয়েছে।

পূর্বে বিদেশ হতে বিএডিসি বেসিক বীজআলু (ঊ-পষধংং) আমদানি করত। তা প্রতি কেজি ১৬০ টাকা মূল্য দিতে হতো। বর্তমানে বিএডিসি উক্ত বেসিক বীজের চেয়ে উন্নত মানের ব্রিডার/প্রি-ফাউন্ডেশন বীজআলু টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন করছে যার উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি মাত্র ৮০ টাকা।

শুধু তাই নয়, মানসম্পন্ন বীজআলু কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করায় দেশের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১২ মে.টন হতে ২০ মে.টনে উন্নীত হয়েছে। কৃষক কর্তৃক ব্যবহৃত সমুদয় বীজ মানসম্পন্ন হলে দেশের ফলন হেক্টর প্রতি ২৫ মে.টনে উন্নীত করা সম্ভব।

ফলে ৫ লক্ষ হেক্টর জমির পরিবর্তে ৪ লক্ষ হেক্টর জমিতেই ১ কোটি মে.টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে করে ১ লক্ষ হেক্টর জমি অন্য ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও বিএডিসি এ প্রকল্পের মাধ্যমে সিড হেলথ্ ও মলিকুলার ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে। সিড হেলথ্ ল্যাবরেটরিতে আলু ভাইরাস রোগসহ অন্যান্য ফসলের রোগব্যাধি সনাক্তকরণ ও তা দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে এবং বীজের মান নিশ্চিত হয়ে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা যাবে।

মলিকুলার ল্যাবরেটরি দ্বারা বিএডিসি নিজস্ব কৌলিসম্পদ বৈশিষ্টকরণ ও সংরক্ষণ কাজ করতে পারবে। জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ এবং তা ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলের ভাল জাত উদ্ভাবন করা যাবে। বর্তমানে আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে রোগ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

নমুনা বীজে রোগের উপস্থিতি আছে কিনা মলিকুলার ল্যাবে চঈজ পদ্ধতিতে তা সনাক্ত করা যাবে।