ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরে দেশে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে যেতে পারে। যদিও বছরের শুরুতে চা উৎপাদনের গতি তুলনামূলকভাবে তেমন দ্রুত ছিলো না।

তবে বছরের শেষভাগে চিত্র বদলে গেছে। সাম্প্রতিক নিলামগুলোয় দাম তুলনামূলক বাড়তি থাকার পাশাপাশি এবারের বর্ষা মৌসুমে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় বাগানগুলোয় চা উৎপাদন বার্ষিক লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি বছরে (২০১৮) বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের বার্ষিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি। গত অক্টোবর পর্যন্ত (১০ মাসে) দেশে সব মিলিয়ে ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। মাসভিত্তিক গড় দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৭৩ হাজার ১০০ কেজিতে।

এ হিসাবে বার্ষিক লক্ষ্য পূরণের জন্য নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশের বাগানগুলোয় আরো ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন করতে হবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার কেজির অনেক বেশি চা উৎপাদন হতে পারে। ফলে ২০১৮ সাল শেষে দেশে বার্ষিক লক্ষ্যের অতিরিক্ত চা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের বাগানগুলোয় ২০১৬ সালে সব মিলিয়ে ৮ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ওই বছর। ২০১৭ সালে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন রেকর্ড অবস্থান থেকে নেমে ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার কেজিতে স্থির হয়।

এখন চলতি বছরে শেষ দুই মাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী চা উৎপাদন হলে পানীয় পণ্যটির বার্ষিক উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৬ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের বর্ষা মৌসুমে সিলেট, চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত চায়ের উৎপাদন বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক নিলামগুলোয় বাড়তি দাম ও জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় দেশীয় উৎপাদনকারীরাও চায়ের উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মূলত এসব কারণে চলতি বছর দেশে বার্ষিক লক্ষ্যের অতিরিক্ত চা উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ জানান, দেশে চা উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদনে জোর দেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি মৌসুমের ৩১তম আন্তর্জাতিক নিলাম। এ নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২৯৫ টাকায়। অতীতের যেকোনো নিলামের তুলনায় এ দাম বেশি। প্রতি বছর শীত মৌসুমে চায়ের চাহিদা বেড়ে যায়।

ফলে পণ্যটির দামও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এবার শীতের পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে চায়ের চাহিদা বেড়েছে। বাড়তি চাহিদা পানীয় পণ্যটির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ নিলামে ৫২ হাজার ৯৮৫ প্যাকেটে (প্রতি প্যাকেটে ৫৫ কেজি) ২৯ লাখ ৬ হাজার ৫৫০ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়। আগের বছরের একই নিলামে ৪৭ হাজার ৩১৮ প্যাকেটে ২৫ লাখ ৯২ হাজার ৯০৪ কেজি চা সরবরাহ হয়েছিল। আসছে ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী নিলামে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮ কেজি চা সরবরাহ হতে পারে। সূত্র: বণিক বার্তা।