ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় চারিদিকে সবুজের সমারোহ। গাছে ফুটেছে নীল রঙের ফুল। জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দূর্গাপুর গ্রামে সুপার ফুড চিয়া চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই নতুন ফসল চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হবে মাত্র ১২ টাকা এবং আয় আসবে ৮০ হাজার টাকা।

এটি শুধু ওই এলাকার জন্যই নতুন নয়। বরং জেলায় এর আগে কেউ আবাদ করেনি এই ফসল। এমনকি দেশেই হাতে গোনা কয়েকজন পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করেছেন বিদেশে থেকে আমদানী করা ফসলটি। হবিগঞ্জে ফসলটির ফলন দেখে নতুন আশার সৃষ্টি করেছে কৃষি বিভাগকে।

পড়তে পারেন: নতুন ফসল চিয়ার কেজি ৫’শ টাকা, ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের!

নবীগঞ্জ উপজেলার দীগলবাক ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের হাওরে কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় বৃটেন প্রবাসী সোহেল চৌধুরীর ৫বিঘা জমিতে চিয়া সিড আবাদ করেন ওই গ্রামের সেলিম আল মামুন নামে এক ব্যাক্তি। তিনি দিনাজপুর থেকে চিয়া সিডের বীজ এনে ফসলটি আবাদ করেন। কৃষি বিভাগ সার্বিক পরামর্শও সহযোগিতা প্রদান করে।

সেলিম আল মামুন বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে চিয়া সিড আবাদে খরচ পড়েছে ১২হাজার টাকা। ফসল আবাদ তেমন একটা কষ্ঠকর নয়। প্রতি বিঘায় ২মন ফসল উৎপাদন হবে। বাজারে চিয়া সিডের মূল্য কেজি প্রতি ১হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি বিঘা জমিতে বিক্রি আসবে ৮০ হাজার টাকা। এই ফসল আবাদে ভালই মুনাফা হবে। যে কোন ফসলের ছেয়ে এই মুনাফা বেশী।

পড়তে পারেন: দেশে এবার ভোজ্য তেলের যোগান দিতে নতুন ফসল ‘সাউ পেরিলা-১’

দীঘলবাক ইউনিয়নের ব্লকে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, এই ফসল আবাদে জৈব সারের প্রয়োগ বেশী করতে হয়। কয়েকবার সেচ দিতে হয়। গরু ও ছাগল চিয়া সিডের গাছ খায় না। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং অধিক খরা না হলে এই ফসলের ভাল ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা এই ফসল আবাদ করে বেশী পরিমাণ লাভবান হতে পারে। সেলিম আল মামুনের জমি অনেক লোকজন দেখতে আসে। অনেক কৃষক এই ফসল দেখে এটি আবাদে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগ ফসলটি আবাদে সবধরনের সহযোগিতা করবে।

নবীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম জানান, চিয়া সিড একটি তৈলজাত ফসল। এদেশে এই ফসল তেমন একটা পরিচিত নয়। ফসলটির উৎপত্তি মেক্সিকোতে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘সালিভিয়া সিপানিকা এল’ এটি বর্ষজীবী ও বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটিতে রয়েছে ১৫-২৫ ভাগ প্রোটিন, ৩৪ ভাগ লিপিড, ২৪ ভাগ ফাইবার এ্যাশ ৪-৫ ভাগ ও শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এছাড়াও এ ফসলে রয়েছে ওমেগা-৩, যা একটি অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

পড়তে পারেন: ব্রাসেলস স্প্রাউট: নতুন ফসল- নতুন সম্ভাবনা

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ফসলটি বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় আবাদ শুরু হয়েছে। নবীগঞ্জের সেলিম আল মামুনের জমিতে খরার জন্য কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও এখন চমৎকার অবস্থা বিরাজ করছে। দেড় মাসের মাঝেই ফসল ঘরে তোলা যাবে। হবিগঞ্জে প্রচুর দোআশ মাটি এবং নদী অববাহিকায় পতিত জমি আছে। এই জমিগুলোতে কাজে লাগিয়ে চিয়া সিড আবাদ বাড়ানো সম্ভব।

কৃষক পর্যায়ে ফসলটি জনপ্রিয় করতে কৃষি বিভাগও কাজ করছে। ফসল ঘরে উঠাতে ৯০দিন সময় লাগে। বেশি ফলনের জন্য ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চাষ করতে হবে। তবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও বোনা যেতে পারে। ফসলটি সব রকম মাটিতে চাষ করা যায়। জমি তিন থেকে চারটি চাষ দিয়ে মাটি ঝুড়ঝুড়া করে নিতে হবে। এই উদ্ভিদের পোকা-মাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ২ টন উৎপাদন লাভ করা সম্ভব।

পড়তে পারেন: বিচি বিহীন নতুন জাত বারি পেয়ারা ৪, ফলন ৩২ টন

হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ দেব বলেন, চিয়া হলো মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি প্রধানত মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মায়। বাংলাদেশে সম্প্রতি এই বীজটির ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশে এই ফসল আবাদ হলে আর বিদেশ থেকে আমদানী করতে হবে না। বরং পরিকল্পিতভাবে ফসলটি আবাদ করতে পারলে এটি বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, সিয়া বীজ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ আমিষ, চর্বি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও আঁশ থাকে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন। চিয়া বীজ শুকনো অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে চিয়া বীজকে বিভিন্ন খাবার যেমন দই, পুডিং বা বিস্কিটের সাথে যোগ করে এর চাহিদা বাড়ানো যেতে পারে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ