মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: চেকপোস্টে চাঁদা না দেওয়ায় নিলামে গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে ঈদের ৭ দিন আগে ১৪ জুলাই তারিখে। ঈদ উপলক্ষে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থেকে ২২টি গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন চার খামারি।

রাস্তায় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গরুর গাড়িগুলো আটকায়। এরপর চাঁদা চাওয়া হয়। খামারিরা চাঁদা দিতে রাজী না হওয়ায় আটককরা গরুগুলো তড়িঘড়ি করে দুপুরের মধ্যেই ভারতীয় গরু দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস ও রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইসমাঈল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “খামারিদের গরু অবৈধভাবে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিক্রি করে দিয়েছে। গরুগুলো রাজশাহী জেলার মধ্যে আটক করা হলেও জেলা কিংবা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর কিছুই জানে না। জানানোর প্রয়োজনবোধ করে নি তারা। এখন খামারিরা কাঁদছেন, তাদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তারা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে সরকারের কাছে।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা গরু রাজশাহীর গোদাগাড়ী রাজাবাড়ী এলাকার চেকপোস্ট আটক করে। ভুক্তভোগীরা গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বেগুনবাড়ি ও ব্রজনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিলামে বিক্রি হওয়া গরুর মধ্যে ব্রজনাথপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের আটটি, বেগুনবাড়ি গ্রামের মো. রহিমের পাঁচটি, মো. মইদুলের চারটি এবং মো. সেলিমের আটটি।

বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ভুক্তভোগী সাদিকুল ইসলাম। কোরবানিতে প্রতিবছরই গরু বিক্রি করেন তিনি। গতবার থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে দেওয়া লকডাউনে স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে চলাচল করেন।

এ খামারি বলেন, প্রাণিখাদ্য সংগ্রহ ও কৃষিজাত পণ্য আনা নেওয়া করেন, সে সময়ে কোনো সমস্যা হয় নি। এবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের বিবিরহাটে গরু বিক্রি করতে যাওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান সাদেরুল ইসলামের কাছে থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়েছেন খামারিরা। যেন রাস্তায় কোনো সমস্যা না হয়। প্রত্যায়নপত্রে তার নিজের ছাড়াও সাথে থাকা প্রত্যেক খামারির নাম ও গরুর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়।

কথা হয় চেয়ারম্যানের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, প্রত্যায়নপত্র লিখে দিয়েছিলাম যাতে রাস্তায় কোন সমস্যা না হয়। সেখানে উল্লেখ করা ছিল, এসব খামারিরা বাড়ির পোষা গরু বিক্রির জন্য তাঁরা চট্টগ্রামের বিবিরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন। গরুগুলো ভারতীয় গরু হিসাবে বিক্রি করে কিভাবে?

সেদিন দুপুরে পানির দরে গরুগুলো বিক্রি করে দেওয়ায় খামারিরা আত্মহারা হয়ে পড়েন। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কাছে অভিযোগ জানান। দপ্তর থেকে প্রত্যেক খামারির সাথে যোগাযোগ করা হয়। দেওয়া হয় আশ্বাস। কিন্তু কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও সুরাহা হয়নি।

লকডাউনে সকল দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার কথা বলা হলেও দেশজুড়ে সমন্বহীনতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, গরুগুলো আটকানোর পর যদি প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে অবহিত করা হতো তাহলে এমনটি হতো না। পুলিশ-প্রশাসন খামারিদের সাথে হয়রানিমূলক আচারণ করছে। যা মোটেও কাম্য নয়। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের নায্য দাবি আদায় করতে প্রাণিসম্পদ দপ্তর সোচ্চার থাকবে।

রাজশাহী গুদামের কর্মকর্তা কাস্টমসের পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব বলেন, বিজিবি ও কাস্টমসের সদস্যরা তাঁদের গুদামে গরু দেওয়ার সময় বলেছেন, কোনো মালিক পাওয়া যায়নি। জব্দ তালিকায় বিজিবি উল্লেখ করেছে, প্রতিটি গরুর দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রাজস্ব কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, তিনি করোনাক্রান্ত।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “ খামারিরা বিজিবিকে চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রত্যায়নপত্র দেখালে ছিঁড়ে ফেলে। খামারিদের গরু ভারতীয় গরু বলে বিক্রি করে দেওয়া কোন চেক না করেই কিংবা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে কথা না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিভাবে তা জানা নাই। তাদের আইনে আছে কিনা? গরুগুলো ভারতীয় হলে উপযুক্ত প্রমাণ থাকা চাই। যা তাদের কাছে কিছুই ছিলনা।”

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে এমন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ এ সমস্ত বিষয় বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে যেখানে যেখানে রিপোর্ট করা প্রয়োজন করা হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। খামারিরা ঈদ করতে পারেনি। আমি পরিদর্শনে গিয়েছি, তাদের সাথে কথা বলেছি।”

জানা যায়, গত ১৫ জুলাই রাজশাহী নগরীতে কাস্টমসের গুদাম থেকে গরুগুলো নিলামে তোলা হয়। পানির দামে বিক্রি করা হয় গরুগুলো। মুন্না নামের এক ব্যক্তি ২২টি গরু মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কিনে নেয়। প্রতিটির দাম পড়ে গড়ে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।

ভুক্তভোগীরা জানান, হাটে এসব গরুর প্রতিটির দাম হতো আনুমানিক ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চেকপোস্টে চাঁদা না দেওয়ায় নিলামে গরু বিক্রির ঘটনাটি সত্য হলে তা হবে খুবই দু:খজনক। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এ্রগ্রিকেয়ার/এমএইচ