ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশজুড়ে আমন ধান চাষের প্রস্তুতি চলছে। এ ধান চাষের আগে চাষিদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণকাজ কাজ হলো এলাকা বুঝে জাত নির্বাচন করতে হবে। এলাকার পরিবেশ অনুযায়ী ভালো মানের জাত চাষ করলেই মিলবে সফলতা।

চাষি ভাইয়েরা আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরা হবে কোন এলাকার জন্যে কোন আমন ধানের জাত উপযোগী তার বিস্তারিত তথ্য।

জাত নির্বাচন: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমন মওসুম ও এর পরিবেশ উপযোগী ৪১টি (৩৯টি ইনব্রিড ও ২টি হাইব্রিড) উফশী ধানের জাত ও ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানা রকম কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছে। অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশে চাষযোগ্য আমন জাতগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

অনুকূল পরিবেশ উপযোগী জাতসমূহ: বিআর৪, বিআর৫, বিআর১০, বিআর১১, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭।

প্রতিকূল পরিবেশে চাষযোগ্য জাত: খরাপ্রবণ এলাকায় ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১। বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য উপযোগি জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৯। এছাড়া বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬ জাতগুলোর নাবি গুণ থাকার জন্য এদের বীজ ২০-৩০ শ্রাবণে বপন করে ৩০-৪০ দিনের চারা সর্বশেষ ৩১ ভাদ্র পর্যন্ত বন্যা প্রবণ এলাকায় রোপন করা যায়।

লবণাক্ত এলাকায় বিআর২৩, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮। জোয়ার-ভাটা প্রবণ অলবণাক্ত এলাকার উপযোগী জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৬,ব্রি ধান৭৭। জলাবদ্ধ এলাকায় হয় এমন এলাকার জন্য উপযোগী জাত- বিআর১০, বিআর২৩, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৮।

বরেন্দ্র এলাকার জন্য জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, ও ব্রি ধান৮০। এছাড়া সুগন্ধি ব্রি ধান৩৪ সহ সমতল বরেন্দ্র অঞ্চলে অনুকূল পরিবেশের  জন্য সুপারিশকৃত সব জাতই চাষ করা সম্ভব। পাহাড়ি এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, এবং ব্রি ধান৮০।

প্রিমিয়াম কোয়ালিটি জাত: দিনাজপুর, নওগাঁসহ যেসব এলাকায় সরু বা সুগন্ধি ধানের চাষ হয় সেখানে বিআর৫, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭৫ ও ব্রি ধান৮০ চাষ করা যায়।

ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত: আমন মওসুমের জন্য ব্রি উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো ব্রি হাইব্রিড ধান৪ ও ৬। এ জাতগুলো বন্যামুক্ত এলাকায় রোপা আমনে অনুকূল পরিবেশে চাষযোগ্য। এ জাতগুলোর চাল মাঝারি চিকন, স্বচ্ছ ও সাদা এবং লম্বা, ভাত ঝরঝরে হওয়ায় কৃষকের কাছে পছন্দনীয়।

নতুন উদ্ভাবিত আমনের জাত: ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০ এবং ব্রি ধান৮৭ জাতগুলো চাষ করে প্রতিনিয়ত উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

আবার জীবনকাল অনুসারে জাতগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদি, মধ্যম মেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি জাত হিসেবে ভাগ করা যায়।

১) দীর্ঘ মেয়াদি জাত (জীবনকাল ১৩৫ দিনের বেশী), যেমন- বিআর১০, বিআর১১, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫১।

২) মধ্যম মেয়াদি জাত (জীবনকাল ১২০-১৩৫ দিন), যেমন- বিআর২৫, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭।

৩) স্বল্প মেয়াদি জাত (জীবনকাল ১২০ দিনের কম), রবি ফসল এলাকায় স্বল্প মেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫ চাষ করে সহজেই ধান কাটার পর রবি ফসল করা যাবে। সূত্র: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর।

আগামী পর্বে পড়ুন বীজতলা তৈরি ও বপনের সময় নিয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল প্রতিবেদন।