নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভিয়েতনামি নারিকেলবাগান কেটে ফেলছেন ঝিনাইদহের শতাধিক কৃষক। তিন বছরের মধ্যে ফল ধরবে কৃষি বিভাগ থেকে এমন আশা দিলেও পাঁচ বছরেও ফল ধরেনি।

বিদেশে থেকে টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে ভিয়েতনামি নারিকেলের ভিডিও দেখে বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হন কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম। দেশে ফিরে ২০১৭ সালে দেড় বিঘা জমিতে রোপণ করেন ভিয়েতনামি নারিকেলের চারা। আশা ছিল তিন বছরের মধ্যে ফলন পেলে আর বিদেশে যাবেন না। অনেক টাকা খরচ করে চার বছরেও কোন ফল ধরেনি তার বাগানে। ফলন না পেয়ে জীবিকার তাগিদে তিনি আবারও পাড়ি জমিয়েছেন সৌদিতে। এখনো রয়েছে তার সেই বাগান।

অন্যদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, সঠিক পরিচর্যার অভাবে গাছে ফল ধরেনি। নতুন করে বাগান করতে নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে বাগানিদের।

কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামের সুরত আলি বলেন, ভাগনে সাতটা ভিয়েতনামি নারিকেলের চারা দেয়। তিনি যত্ন করে চারাগুলো লাগান, পরিচর্যা করেন। বলা হয়েছিল তিন বছরের মধ্যে ফল ধরবে। উচ্চফলনশীল হওয়ায় এক গাছে অনেক ফল ধরবে এমনো বলা হয়েছে। পাঁচ বছর হতে চলল, তার গাছে ফল ধরেনি। গাছগুলো বড় হয়েছিল। ৫টি গাছ কেটে ফেলেছেন। দুটি গাছ এখনো আছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের জাহিদ জোয়ার্দ্দার জানান, ২০১৭ সালে হার্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রদর্শনী বাগান তৈরিতে বিনা মূল্যে ৫০টি ভিয়েতনামি নারিকেল চারা দেওয়া হয়। ৪৫ শতক জমির ওপর বাগান তৈরি করেন। পাঁচ বছর হতে চললেও ফল ধরেনি। চার বছর পার হলেও ফল ধরেনি সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ মাসুদ লিটনের বাগানে।

হার্টিকালচার সেন্টার থেকে চারা সরবরাহ করা হয় তার প্রদর্শনী বাগান করার জন্য। তাদের প্রদর্শনীর গাছগুলোতেও ফল আসেনি। বাগানিদের অভিযোগ, শুরুতে কৃষি বিভাগ ও হার্টিকালচার সেন্টার আশা দেখালেও সে অনুযায়ী ফল পাননি তারা। আগে নিয়মিত পরামর্শ দিলেও এখন তাদের খোঁজ মেলে না।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার ছয় উপজেলায় শতাধিক ভিয়েতনামি নারিকেল বাগান রয়েছে। এসব বাগানে ২ হাজারের বেশি গাছ আছে। আবার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় বাগানের দুই একটি গাছে নারিকেল ধরেছে।

বারির সাবেক মহাপরিচালক ও নারিকেল বিশেষজ্ঞ ড. নাজিউল ইসলাম বলেন, ভিয়েতনামি নারিকেল গাছের জন্য সর্বক্ষণ বাতাসের গতিবেগ থাকতে হবে ১৫-২০ কিলোমিটার। বাগানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমপক্ষে তিন মিটারের নিচে থাকবে না। দিনরাতে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকবে না।

সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলোতে এ প্রজাতির নারিকেল চাষের জন্য অনুকূল আবহাওয়া থাকে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ভিয়েতনামি নারিকেল চাষের অনুকূল নয়। লাগানোর দুই আড়াই বছর পর ফল ধরে। কিন্তু সাত বছর পর ফল ধরে না। গাছের জীবনকাল ১০ বছর। যারা বাগান করেছেন তারা ভুল করেছে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের উপপরিচালক মো. আজগর আলি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, তিন বছরে ফলন আসার কথা থাকলেও তা হয়নি। মূলত পরিচর্যার অভাবে এমনটা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ