নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ মৎস্য আইনে টাকি-শোল মাছের পোনা ধরলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট ( চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকি মাছের পোনা ঝাঁক বা দম্পতি মাছ ধরা ও ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। কেউ এ আইন অমান্য করলে অর্থদণ্ড ও জেল কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন ১৯৫০ এর ক্ষমতা বলে প্রনীত Protection and Conservation of Fish Rules,1985 এর বিধি-৭ এ এসব তথ্য রয়েছে।

মৎস্য সংরক্ষণ আইন , ১৯৫০   

দি প্রটেকশন এন্ড কনজারভেশন অব ফিস এ্যাক্ট-১৯৫০; সাধারণভাবে মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ নামে পরিচিত । নির্বিচারে পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছ নিধন মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে বিরাট অন্তরায়। এ সমস্যা দূরীকরণে সরকার মাছের আকার, প্রজনন ও বৃদ্ধির সময়, বিচরণক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে কতিপয় বিধি নিষেধ আরোপ করে ১৯৫০ সলে এ আইন প্রণয়ন করে ।

 পরবর্তীতে বাস্তব প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আইনটি উলেস্নখযোগ্য সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয় । এ আইনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিমণরুপ-

1.      চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত কোন ব্যক্তি কৃর্তক –

(ক)     প্রতি বছর জুলাই হতে ডিসেম্বর ( আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি হতে পৌষ মাসের মাঝামাঝি ) মাস পর্যমত্ম ২৩ সেন্টিমিটারের ( ৯ ইঞ্চি) ছোট আকারের কাতলা, রুই, মৃগেল, কালিবাউস ,ঘনিয়া;

(খ)      প্রতি বছর নভেম্বর হতে মে ( কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হতে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝিামাঝি ) মাস পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের ( ৯ ইঞ্চি) ছোট আকারের ইলিশ ( যা জাটকা নামে পরিচিত );

(গ)      প্রতি বছর নভেম্বর হতে এপ্রিল ( কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হতে বৈশাখ মাসের মাঝিামাঝি ) মাস পর্যমত্ম ২৩ সেন্টিমিটারের ( ৯ ইঞ্চি) ছোট আকারের পাংগাস;

(ঘ)      প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী হতে জুন ( মাঘ মাসের মাঝামাঝি হতে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি ) মাস পর্যন্ত ৩০ সেন্টিমিটারের ( ১২ ইঞ্চি) ছোট আকারের আকারের সিলন, বোল ও আইড় মাছ ধরা, নিজের দখলে রাখা, পরিবহন বা বিক্রয় করা নিষিদ্ধ ।

২.       চাষের উদ্দেশ্যে মাছ ধরার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে  (বর্তমানে সংশ্লিষ্ট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ) নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে লাইসেন্স প্রাপ্ত না হলে বিধিবদ্ধ ২৭টি নদী, খাল ইত্যাদিতে নির্ধারিত সময়ে যে কোন আকারের রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস এবং ঘনিয়া আহরণ বা আহরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবেনা ।

৩.       চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত সাধারণভাবে নদী-নালা, খাল ও বিলে সংযোগ আছে এরুপ জলাশয়ে প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগষ্ট ( চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি ) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকি মাছের পোনা ঝাঁক বা দম্পতি মাছ ধরা ও ধ্বংস করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না ।

৪.       জলাসেচ , বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা নর্দমার উদ্দেশ্য ব্যতীত নদী- নালা, খাল ও বিলে অস্থায়ী বাঁধ বা কোনরুপ অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না ।

৫.       নদী- নালা, খাল- বিলে স্থায়ী স্থাপনার মাধ্যমে ( ফিক্সড ইঞ্জিন ) মৎস্য আহরণ করা যাবে না , এরুপ ক্ষেত্রে স্থায়ী স্থাপনা  অপসারণ এবং জব্দ করা যাবে ।

৬.       বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে মাছ মারা যাবে না । অভ্যন্তরীণ  জলাভূমিতে  বিষ প্রয়োগ , পরিবেশ দূষণ , বাণিজ্যিক বর্জ্য বা অন্যবিধ উপায়ে মাছ ধংসের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না ।

৭.       মাছ ধরার ক্ষেত্রে ৪.৫ সেন্টিমিটার  বা তদপেক্ষা কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের ফাঁস বিশিষ্ট ফাঁসজাল এর ব্যবহার নিষিদ্ধ ।

8. ইলিশ অভয়াশ্রম সংরক্ষণঃ সরকার ঘোষিত ৪ টি ইলিশ অভয়াশ্রম এলাকায় প্রতি বছর মার্চ হতে এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার চর আলেজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলা জেলার মদনপুর/ চর ইলিশা হতে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটিার, ভোলা জেলার ভেদুরিয়া হতে পটয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা এবং প্রতি বছর নভেম্বর হতে জানুয়ারী পর্যন্ত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকায় কোন ব্যক্তি মাছ ধরতে বা ধরার কারণ সৃষ্টি করতে পারবে না ।

৯.     ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণঃ ইলিশ মাছের অবাধ প্রজননের সুযোগ দেয়ার জন্য চট্রগ্রাম জেলার মীরসরাই  উপজেলার শাহেরখালী / হাইতকান্দি পয়েন্ট, ভোলা জেলার তজমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজমুদ্দিন / পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট ,কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া / গন্ডামারা পয়েন্ট এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালি পয়েন্টসমূহের অন্তর্গত প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রজনন ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১৫-২৪ অক্টোবর ( ১-১০ আশ্বিন ) ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ।

10.মৎস্য অফিসার বা পুলিশ অফিসার ( সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যদার নিচে নহে ) এর অভিযোগ বা রিপোর্টের ভিত্তিতে মৎস্য আইন ভঙ্গ করা আমলযোগ্য অপরাধ ( কগনিজিবল অফেন্স ) ।

১১.শাস্তি

(ক)     প্রথমবার আইন ভঙ্গকারীর শাস্তি হবে কমপক্ষে ১ মাস হতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড    এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ১,০০০/- টাকা জরিমানা ।

 (খ)     পরবর্তীতে প্রতিবার আইন ভঙ্গের জন্য কমপক্ষে ২ মাস হতে সর্বোচ্চ ১

বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ২,০০০/- টাকা জরিমানা ।

পুকুর উন্নয়ন আইন, ১৯৩৯

গ্রামবাংলার   বেসরকারি  মালিকানাধীন  অসংখ্য  ছোট  বড়  পুকুর  বহুমালিকানাধীন  থাকায় শরীকদের মতামত্মর সহ বিবিধ কারণে অব্যবহৃত থাকা এরম্নপ মজা ও পতিত পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষের আওতায় আনার জন্য ১৯৩৯ সালে পুকুর উন্নয়ন আইন প্রনীত হয় । পরবর্তীতে ১৮৯৬ সালে আইনটি সময়োপযোগী করে সংশোধন করা হয় । এ আইনের প্রধান বৈশিষ্ট নিমণরম্নপঃ

১.       পতিত হিসেবে চিহ্নিত কোন দীঘি বা পুকুর প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক কাজ করে তা মাছ চাষের আওতায় আনার জন্য জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুকুর মালিককে নোটিশ দিবেন ।

২.       নোটিশ দেওয়ার পর যদি মালিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছ চাষ না করেন, তাহলে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংশিস্নষ্ট পুকুরটিকে একটি পতিত পুকুর হিসেবে ঘোষণা করে উহা অধিগ্রহণ করবেন ।

৩.       অধিগ্রহণকৃত পুকুরটিতে মাছ চাষে আগ্রহী স্থানীয় কোন সংস্থা বা সমিতি বা ব্যক্তির কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ( তবে ২০ বছরের বেশী নয় ) তা হসত্মামত্মর করবেন ।

৪.       বহুমালিকানাধীন পুকুরের ক্ষেত্রে একজন / একাধিক অংশীদার কাংখিত সংস্কারমূলক কাজ করে মাছ চাষে আগ্রহী থাকলে হসত্মামত্মরকালে এরম্নপ অংশীদারদের অগ্রধিকার দেয়া হবে ।

৫.       হসত্মামত্মরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুকুর মালিককে পুকুর ফেরৎ দেয়া হবে ।

৬.       পুকুরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকাকালে পুকুর মালিক তার পুকুরটির জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাজনা বা ভাড়া পাবেন ।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ