টেকসই কৃষির লক্ষ্য পূরণে

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং টেকসই কৃষির লক্ষ্য পূরণে মেধাবী ও তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, একসময়ে কৃষি সম্মানজনক পেশা ছিলো না। অভিজাতরা কৃষককে চাষা বলে গালি দিতো। দিন বদলেছে, কৃষি এখন অভিজাতদের পেশায় পরিণত হয়েছে। অনেক মেধাবী ও তরুনরা পশ্চিমা দেশের  উচ্চ ডিগ্রী  নিয়ে কৃষি কাজ করছেন।



তাই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং টেকসই কৃষির লক্ষ্য পূরণে মেধাবী ও তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। অন্য যেকোন ক্ষেত্র থেকে দেশে কৃষির সম্ভাবনা অনেক বেশি।

রোববার (১৩ অক্টোবর, ২০১৯) রাজধানীর দিলকুশার কৃষি ভবনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর ৫৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা দানাদার ফসলে স্বয়ংসম্পর্ণ হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত্ব থাকে। আমরা এখন দেশকে পুষ্টিসম্মত নিরাপদ খাদ্য দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এজন্য দরকার কৃষির বহুমুখীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ, যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়ন। এতে লাভজনক হবে কৃষি। মানুষের কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে। সে আয় দিয়ে মানুষ পুষ্টিমানের খাবার কিনে খেতে পারবে।

তিনি বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনায় কৃষিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। বিএডিসিকে ভেঙ্গে বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টা চালায়। একসময় সারের দাবীতে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ১৮ জন কৃষক।

অথচ এখন সার কৃষকের হাতের নাগালে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে হয়তো বিএডিসি ভবনও থাকতো না।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ভিত্তিবীজের সরবরাহ শতকরা ৬ ভাগ থেকে ২০ ভাগে উন্নীত করেছে বিএডিসি। কৃষির উন্নয়নের জন্য বিএডিসিকে আরো নতুন নতুন কর্মসূচি নিতে হবে। ভূট্টার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।

তিনি বলেন, ৬০ লাখ মেট্টিক টন নয় আমাদেরকে এক কোটি মেট্ট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এগুতে হবে। ছোট খাটো জায়গায় নয়, পরিকল্পিতভাবে অনেক বড় জায়গা নিয়ে ব্যপকভাবে ভূট্টা ও গ্রীষ্মকালীন টমেটোসহ অর্থকরী ফসলের চাষ বাড়াতে হবে।

আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম ধারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এটা এখন আমরা আমাদের ঘর থেকে শুরু করেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএডিসিসহ কোনো দপ্তরের কেউ জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। সকলকে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিএডিসিকে সম্মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সকলকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, আমি বিএডিসির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় একটি ডায়েরী মেনটেইন করতাম। তার নাম ছিলো স্বপ্ন লিপিবদ্ধকরণ ডায়েরী। সেখানে অনেক স্বপ্ন লিপিবদ্ধ করা আছে। যার অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে কী পরিমান বীজের চাহিদা রয়েছে ও কী পরিমান উৎপাদন হচ্ছে, তার একটা গবেষণা দরকার। একটি কর্মসূচির মাধ্যমে বীজের চাহিদা নিরুপন করার কাজটি এগিয়ে নিতে পারলে দেশে আর বীজের প্রকৃত চাহিদা নির্নয় করা যাবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে  কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান এমপি,  সাবেক কৃষি সচিব ও এপিএ বিশেষজ্ঞ পুলের সদস্য ড. এস এম নাজমুল ইসলাম, মো. আজহারুল ইসলাম ও জাকির হোসেন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এর আগে কৃষিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও ইলেকট্রনিক গেইট উদ্বোধন করেন। টেকসই কৃষির লক্ষ্য পূরণে মেধাবী ও তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর। এতে কৃষির চিত্র পরিবর্তন হবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: সোলার পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গ দমনে ই-পেষ্ট কার্যক্রম খুবই উপযোগী