নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ৫০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করতে চান গো-খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, আমরা গরুর মাংসের দাম কমাতে চাই। মানুষের নাগালের বাইরে থেকে স্বস্তি আনতে চাই। ঢাকার ২০টি স্থানে ফারমার্স মার্কেট গড়ে তুলতে চাই। এসব মার্কেটে ৫০০ টাকা কেজি দরে মাংস মিলবে। সিটি করপোরেশনের সাথে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হবে এসব মার্কেট।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে। প্রথম অবস্থায় খামারিরা গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করলেও মার্কেট তৈরি হলে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ৫০০ টাকায় মাংস পাবে ভোক্তা।

জানা যায়, খামারিরা সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমেই বেশিরভাগ গরুর মাংস বিক্রি করে থাকে, যেখানে ৮০০-৮৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়। তাদের ঘোষিত এই দাম ঢাকার খুচরা বাজারের মাংস বিক্রেতাদের জন্য নয়। তবে খামারিরা বলছেন, খামার পর্যায়ে মাংসের দাম কমলে সেটা খুচরা পর্যায়েও কমাতে বাধ্য করবে।

স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে ৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে গরুর মাংসের দাম ৫০০-৫৫০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে একটি সুপারিশ তুলে ধরেন বিডিএফএ’র সভাপতি মোঃ ইমরান হোসেন।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাত উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। জাত উন্নয়নের মাধ্যমেই গরুর মাংসের দাম ২০-২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করা হয়।

কি-নোট পেপারে বলা হয়, দুই বছর বয়সী একটা দেশি গরু আরসিসি, নর্থ বেঙ্গল, গ্রে, শাহীওয়াল থেকে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। যেখানে মাংসের জাত হিসেবে পরিচিত ব্রাহমাতে যেতে পারলে একই সময়ে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া সম্ভব, যেটা উৎপাদন খরচকেও কমিয়ে আনবে। কারণ দেশি জাতের এক কেজি মাংস উৎপাদনে ১২-১৩ কেজি খাবার দরকার, যেখানে ব্রাহমার এক কেজি মাংস উৎপাদনে ৫-৬ কেজি খাবার প্রয়োজন।

প্রসেসড ফিডের উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। ফসলের উচ্ছিষ্টাংশ যেমন ধানের খড়, ভুট্টা গাছের কান্ড, বিভিন্ন ডালের গাছ, কলাগাছ সহ অন্যান্য সকল প্রকার ফসলের বাইপ্রোডাক্ট প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে উচ্চমানের গোখাদ্য তৈরী সম্ভব। দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে চাষীরা কিভাবে এই খাবার কম খরচে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে, কম দামে বিকল্প খাদ্য পাওয়া সম্ভব যা মাংসের দামে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়া যথাযথ মূল্যে চামড়া বিক্রির ব্যবস্থার কথা বলা হয়। ৪-৫ হাজার টাকা মূল্যের চামড়া এখন মাত্র ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চামড়ার সঠিক দাম দিতে পারলে প্রতি কেজি মাংসে ৩০-৪০ টাকার একটা প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন পিস চামড়া উৎপাদন হয়, যেখানে আমরা ব্যবহার করতে পারি মাত্র ১ মিলিয়ন। বাকিটা নিয়ম মেনে রপ্তানি করতে পারলে দাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

গরুর হাটের খাজনাও গরুর মাংসের দামে একটা বড় প্রভাব ফেলছে বলে তুলে ধরা হয়। আগে যেখানে লাখ টাকার একটা গরুতে ৫০-১০০ টাকা খাজনা দিতে হতো এখন সেটা ৫% দিতে হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকার গরুতে ৫ হাজার টাকা খাজনা। এই খাজনার পরিমাণ কমিয়ে আনা গেলে তরিত্ব প্রভাব হিসেবে মাংসের দাম কমানো সম্ভব।

এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, আমাদের কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। আমরা দুধ উৎপাদনকে বেশি প্রায়োরিটি প্রদান করছি, মাংস রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কিন্তু আমাদের উচিত দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানোটাকে সমানতালে নিয়ে যাওয়া।
ভোক্তা পর্যায়ে মাংসের দাম কমানোর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে যে পদক্ষেপ দরকার সেগুলো আরও পর্যালোচনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা হবে।

কৃষি গবেষকদের মতে, ডেইরি ফিডের দাম কমিয়ে মাংস উৎপাদনে কম খরচ পড়লে ৫০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করলেও খামারিদের লোকসান গুণতে হবে না। সেইসাথে উৎপাদন বৃদ্ধি হলে দেশে স্বস্তি ফিরে আসবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩