নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ঢেঁড়স চাষ করতে গিয়ে বিভিন্ন রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণে বেশ বিপাকে পরতে হয় চাষিদের। এসময়ে দরকার সঠিক ব্যবস্থাপনা। আসুন জেনে নেয়া যাক ঢেঁড়সের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য।

ঢেঁড়সকে ইংরেজিতে বলা হয় ওকরা (Okra)। এ সবজি ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও লোহাসমৃদ্ধ। ঢেঁড়সে প্রতি ১০০ গ্রামে ভক্ষণযোগ্য অংশে আমিষ (১.৮ গ্রাম) ভিটামিন-সি (১৮ মিলিগ্রাম) খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালশিয়াম (৯০ মিলিগ্রাম), লোহা (১ মিলিগ্রাম) ও আয়োডিন রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, অক্সালিক এসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড।

আমেরিকার বাইরের ইংরেজিভাষী স্থানে এটি লেডিজ ফিঙ্গার (Lady’s Fingers) নামেও পরিচিত । বাংলাদেশে এর অন্য নাম ভেন্ডি। দেশের সব জায়গাতেই এর চাষ করা হয়। ঢেঁড়সের কয়েকটি জাতের মধ্যে একটি বারি ঢেঁড়শ ১।

বৈশিষ্ট্য :

১। বারি ঢেঁড়শ ১ এর ফল সবুজ, প্রস্থছেচ্দে পাঁচকোণী, দৈর্ঘ্যে ১৪-১৮ সেঃ মিঃ।
২। জাতটিতে গাছ প্রতি সবুজ রংয়ের ৩০-৩৫ টি ফল ধরে।
৩। হেক্টর প্রতি ফলন ১২-১৫ টন।

ফেব্রয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত আবাদ করা যায়। সেইসাথে ফল ধারনের ১০-১২ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়।

বারি ঢেঁড়শ ১ এর রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে নিই- হলুদ শিরা বা মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ঢেঁড়স।

                                           হলুদ শিরা বা মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত ঢেঁড়স

হলুদ শিরা বা মোজাইক ভাইরাস দমন ব্যবস্থা:

১। বাহক পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটারপানিতে ম্যালাথিয়ন/সুমিথিয়ন ২মিলি ঔষধ মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

২। গাছ আক্রান্ত হওয়া মাত্র তুলে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে।

পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা: ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা (সাদা মাছি) আক্রমন করে থাকে।

                                                   ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা সাদা মাছি

সাদা মাছি দমন ব্যবস্থা:

১। ৫০ গ্রাম সাবান/সাবানের গুড়া ১০ লিঃ পানিতে মিশিয়ে পাতার নীচে সপ্তাহে ২-৩ বার ভাল করে স্প্রে করতে হবে।
২। ফসলের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করা।

৩। ম্যালথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২মি.লি. পারিমাণ) অথবা এডমায়ার ২০০ এমএল (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫মি.লি. পরিমাণ) মিশিয়ে স্প্রে করা।

ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা:
১। সপ্তাহে অন্তত: একবার মরা বা নেতিয়ে পড়া ডগা, আক্রান্ত ফুল ও ফল সংগ্রহ করে কমপক্ষে একহাত গভীর গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে।

২। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করে পোকার কীড়া বা পুত্তুলি ধ্বংস করা।

৩। বিকল্প পোষক গাছ যেমন তুলার আবাদ ঢেঁড়শের জমির কাছাকাছি না করা।

৪। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে অন্ত:বাহী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে বিষ প্রয়োগের দুই সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য কোন ফল সংগ্রহ করা যাবে না ।

উপকারিতা:

১. বাজে কোলেস্টেরল কমায় ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন; যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রতিরোধ করে।

২. গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিস্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে।

৩. ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে ঢেঁড়স ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

৪. শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী।

৫. কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ঢেঁড়স কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ঢেঁড়সের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।

ঢেঁড়সের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা শিরোনামে সংবাদের তথ্য কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডারউইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।