তরল দুধের ৯৬টি নমুনার

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দুধের ৯৬টি নমুনার ৯৩টিতে ক্ষতিকর উপাদান, প্যাকেটজাতে ৩১টির ১৮টিতেই ভেজাল। বাজারে প্রচলিত তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে।

প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার মধ্যে ১৮টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে। এছাড়া দুধে ও দইয়ে পাওয়া গেছে উচ্চমাত্রার বিভিন্ন রাসায়নিক।



এসব তথ্য উল্লেখ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে হাইকোর্টে। তবে কোন কোন কোম্পানির দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে নি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। একারণে ওইসব কোম্পানির নাম আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

এর সঙ্গে জড়িতদের নাম-ঠিকানাও দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ মের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এই তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বুধবার (৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাজার থেকে সংগৃহীত কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই সীসা, অ্যান্টিবায়েটিক অনুজীব পাওয়া গেছে।

প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার মধ্যে ১৮টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে। এছাড়া দুধে ও দইয়ে উচ্চমাত্রার বিভিন্ন রাসায়নিক পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে গরুর দুধ, দুই এবং গো-খাদ্যে কী পরিমান ব্যাক্টেরিয়া, কীটনাশক, সীসা রয়েছে তা নিরূপনের জন্য একটি জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

১৫ দিনের মধ্যে খাদ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণী সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপত্তার খাদ্য কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে জরিপের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (৮মে) মামলাটি শুনানির জন্য আসে। এরপর এই আদেশ দেন আদালত।

দাখিলকরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাভির খোলা দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ দুধেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর অণুজীব। ১৫ শতাংশ দুধে মিলেছে মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা।

১৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি টেট্রাসাইক্লিন, ৯ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও ৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আফলাটক্সিনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া বাজারে থাকা প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশে বিভিন্ন অণুজীব, ৩০ শতাংশে একইভাবে মানুষের শরীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার টেট্রাসাইক্লিন, একটিতে বেশি মাত্রার সীসা, কয়েকটিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন পাওয়া গেছে।

কিছুদিন আগে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই দিন আদেশ দেন।

ফণিতে ৬৩ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত, ৩৮ কোটি টাকা ক্ষতি

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাভীর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত। আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০.৫ হলেও পাওয়া গেছে ০.৯৯৬ পর্যন্ত।



টেট্রাসাইক্লিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৬৭১.১৩ পর্যন্ত, সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ১৪৮.৩৬ পর্যন্ত। কীটনাশকের মাত্রা ৫ সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৯.৫০-১৬.২০ পর্যন্ত।

প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিনের সহনীয় মাত্রা ১০০ হলেও দেশীয় প্যাকেটজাত দুধে পাওয়া গেছে ১৮৭.৫৮ পর্যন্ত। আমদানিকৃত প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে এই উপাদানের মাত্রা ৭১৭.৮২ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আর আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০.৫ হলেও পাওয়া গেছে ১.৯৩ পর্যন্ত।