সজিব ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: তালের শাঁস ১০ টাকায়! হ্যাঁ, প্রচন্ড তাপদহে রাজশাহীর চারঘাটে তালের শাঁসের কদর বেড়েছে। চিকিৎসকরা তালের শাঁসকে শরীরের জন্য বেশ উপকারি বলছেন।

মানুষ শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে তালের শাঁস কিনে খাচ্ছেন। দাম কিছুটা বেশী হলেও সে দিকে তাকাচ্ছেন না ক্লান্ত ও পরিশ্রমী মানুষগুলো। বেশীর ভাগ শ্রমজীবি মানুষের কাছে তালের শাঁসের কদর বেশী।

প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছেই প্রিয় সুস্বাদু এই তালের শ্বাস। ভ্যাপসা গরমে শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে বেশ ভূমিকা রাখে এই ফলটি। সুস্বাদু এই তালের শ্বাসে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ওষুধি গুণও। যার ফলে সব শ্রেনী পেশার মানুষদের দেখা যায় সুস্বাদু এই তালের শ্বাস খেতে।

শুধু তালের শ্বাসই নয়, তালের রস, তালের গুড়, পাকা তাল, তালের পিঠা, পাকা তালের বিচির শাঁস এসবই অত্যন্ত মজার ও উপাদেয় খাবার। আর তালের দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। মৌসুমি এই ফলের মাসে বিভিন্ন ফলের সঙ্গে এই ফলেরও কদর বেড়েছে।

রবিবার (২৩ মে) সরেজমিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার রাস্তাঘাট,ফুটপাতসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে সুস্বাদু এই ফলটির বিক্রেতারা হাঁসুয়া বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাল কেটে তালের শাঁস বের করছে আর ক্রেতারাও অনেক আগ্রহ নিয়ে এই ফলের শ্বাস কিনছেন।

উপজেলার হলিদাগাছি বাজারের তাল বিক্রেতা নজরুল ইসলাম জানান, একটি তালের ৩ টি শাঁস বিক্রি করছি ১০ টাকায়। মৌসুমের আগেই আমি গ্রামে ঘুরে গাছ চুক্তি করে তাল কিনে রাখি। একটি গাছের তালের দাম পড়ে প্রায় ৭০০-৮০০ টাকায়। বিক্রি ভালো হলে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হয়। তবে করোনা আর লকডাউনের ফলে অন্য বছরের তুলনায় বিক্রি একটু কম বলে জানান এই বিক্রেতা।

চারঘাট উপজেলার খুদির বটতলা বাজারের ভ্যান চালক রব্বেক আলী জানান, তাল যখন কাঁচা থাকে, তখনও খাওয়া যায়, তখন বাজারে এটি পানি-তাল হিসেবেই বিক্রি হয়। কেউ বলে তালশাঁস আবার কেউ বলে তালের চোখ, কেউ বলে তালকোরা। ভ্যান চালানোর বিরতির মধ্যে আমি তালের শাঁস কিনে খায় তাতে ক্লান্তি দূর করে।

উপজেলার চৌরাস্তা মোড়ের তালশাঁস বিক্রেতা আলীম আলী জানান, প্রতিটি তালের ভেতরে ৩ থেকে ৪ টি শ্বাস থাকে প্রতিটি তাল গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেচাকেনা হয়। প্রতিটি তালের পাইকারি দাম ৫ থেকে ৬ টাকা। গরম পড়লে তালের শ্বাস অনেক ভালো বিক্রি হয়। প্রতি বছর আমি এই মৌসুমে তালের শ্বাস বিক্রি করে থাকি।

সুস্বাদু এই তালের শ্বাসের গুণাগুণ সম্পর্কে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাসিম আহমেদ বলেন, তালের শ্বাস শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।তালের শাঁসের জলীয় অংশ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। প্রাকৃতিকভাবে দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। তাল শাঁসে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স পানিপানের তৃপ্তি বাড়ায়। এছাড়া রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে,এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাল শাঁস।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল মোনায়েম সাদ বলেন, তালের শাঁসের অনেক উপকারীতা রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। তালের শাঁস একটি আশযুক্ত খাবার। এ শাঁস খেলে ক্লোণ ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম থাকে। তিনি আরো বলেন, পরিস্কার পরিছন্নভাবে না খেলে আবার ডায়েরিয়ারও ঝুঁকি থাকে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ