ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের’ (এলডিডিপি) প্রদর্শনীতে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর চত্বরে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী-২০২২ এর আয়োজন করা হয়। সারাদিন প্রদর্শনী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়েছে মাত্র তিন ঘন্টায়!

প্রকল্পের ওয়েবসাইটে নোটিশ বোর্ডে প্রকাশিত গাইডলাইনে দিনব্যাপাী প্রদর্শনী করার নিয়ম থাকলেও দায়সারা আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ সচেতন মহল ও খামারিদের। প্রদর্শনী শেষ করা হয় মাত্র তিন ঘন্টায়; আয়োজনে বিস্তর টাকা খরচ হলেও খামারি ও সাধারণ মানুষের তেমন কোন উপস্থিতি ছিল না। ফলে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ব্যহত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। স্টলগুলোতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের।

প্রকল্পের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, দেশের পার্বত্য জেলা ব্যতীত ৬১ জেলার ৪৬৫ উপজেলা এবং সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই অর্থের মধ্যে বিশ্বব্যাংক সহায়তা করছে প্রায় ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রচার-প্রচরণা ছাড়াই “পুষ্টি, মেধা, দারিদ্র্য বিমোচন প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর আয়োজন” এই স্লোগানে এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বেলা ১১ টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। সভা ও পুরস্কার বিতরণ শেষে দুপুর ২টায় প্রদর্শনীর কার্যক্রম শেষ করা হয়। এতে ৩২টি স্টল সাজানো হলেও মাত্র ১৫-১৭টি স্টলে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বাকিগুলো খালি থাকে। দর্শনীর গেট পার হলে প্রথমেই চোখে পড়ে অন্তত ৬টি ওষুধ কোম্পানির স্টল। এছাড়া কয়েকটি স্টলে গরু-ছাগল ছিল। স্টল দেয়া প্রত্যেককেই পুরস্কৃত করা হয়।

১৫-২০ জন প্রকৃত খামারি ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রদর্শনীর ব্যাপারে মাইকিং করা হয়নি। এমনকি বেশিরভাগ খামারিকেও জানানো হয়নি। স্থানীয় পত্রিকা, মাইক, পোস্টার, লিফলেট এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করে জনসাধারণকে অংশগ্রহনের জন্য উৎসাহিত করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।

প্রদর্শনীতে ওষুধ কোম্পানির স্টল দেয়া নিয়ে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এখানে অর্ধশতাধিক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের পছন্দমত ৬টি কোম্পানিকে স্টল দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলায় স্টল দেয়া একটি কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের ডাকে তারা মেলায় স্টল দিয়েছেন।

তবে সেখানে তাদের কোন ওষুধ বিক্রি হয়নি। সব মিলিয়ে ৮-১০ জন পরামর্শ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। মেলার অন্য স্টলগুলো থেকেও তেমন কিছু বিক্রি হয়নি বলে জানান গরু, ছাগল ও কবুতর নিয়ে আসা ব্যক্তিরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল মালেক জানান, ইউএনও এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য যেভাবে করতে বলেছেন তিনি সেভাবেই করেছেন। প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে প্রকল্প পরিচালকের কার্র্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

দায়সারা প্রদর্শনীর বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মিলন জানান, প্রকল্পের গাইডলাইন মেনে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। উল্লেখ্য, গত বছরও অনুরুপ দায়সারা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মাত্র দেড় ঘন্টায় শেষ করা হয়েছিল প্রদর্শনী।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ