নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: দেশে নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করে এখন পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করার কাজ শুরু হয়েছে। এসব নতুন জাতের মুরগি ৪৯ দিনে বিক্রির উপযোগী হবে। উদ্ভাবিত নতুন তিনটি জাত হচ্ছে, সাসো লি রেড, সাসো ব্লেন্ড ফাস্ট এবং সাসো ব্লেন্ড ফাস্টার।

গবেষণাগারে উদ্ভাবিত এ মুরগির জাত মূলত মাংসের জাত। অল্প দিনে ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি দ্রুত পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে খাওয়ার উপযোগী হয়। দেশে মুরগির মাংসের চাহিদাকে মাথায় রেখে এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

এ মুরগি ৪৯ দিনে দ্রুত বেড়ে খাওয়ার উপযোগী হয়। পাশাপাশি এ জাতের মুরগিগুলোকে উন্নতমানের খাবার (ফিড) ও অ্যান্টিবায়োটিক কম প্রয়োগ করা হয়। প্রথাগত ব্রয়লার মুরগির চেয়ে এ জাতের মাংসের পুষ্টিগুণ, স্বাদও তুলনামূলক বেশি। ফলে এ জাতের মুরগির মাংসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আরানখোলা ইউনিয়নের চুনিয়া গ্রামে সাসো খামার উদ্বোধন করা হয় মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর)। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যন্ডের রাষ্টদূত ইরমা ভ্যান ডুরেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নেদারল্যান্ড দূতাবাসের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র পলিসি উপদেষ্টা হারুনি ওসমান, একই দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি সারা বান হভি, নেদারল্যান্ডভিত্তিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লারিভ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ম্যাথিস ব্রিনেন, দেশীয় কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনারসের পরিচালক জাহেদুল আমিন, হ্যান্ডরিক্স জেনেটিকসের কান্ট্রি ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন, নওরিশের প্রকল্প সমন্বয়ক নুরুল বাশার সরকার ও অন্যান্য নেতারা।

লাইটক্যাসল পার্টনারস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পোল্ট্রি টেক বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় সাসো খামার’ হিসেবে এর পথচলা শুরু হলো। দেশীয় প্রতিষ্ঠান খালেদ গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রতিষ্ঠান নওরিশ পোল্ট্রি এই খামার পরিচালনা করবে।

নেদারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডরিক্স জেনেটিক এই সাসো খামারের প্রজননভিত্তিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় এটি উদ্ভাবন করা হয়। পাবলিক— প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ২০২১ সাল থেকে পোল্ট্রি টেক বাংলাদেশ’ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার নতুন জাতের এ মুরগি উৎপাদন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও কয়েক হাজার এ মুরগি উৎপাদন বাড়ানো ও খামারিদের মধ্যে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে এ খামার গড়ে তোলা হয়েছে।

১০টি কোম্পানি এক্ষেত্রে সহায়তা দিচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলো, এরেস ট্রেনিং সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল, হেন্ডরিক্স জিনেটিকস, মেভিটেক, নিউট্রিকো, রয়েল পাস রিফর্ম ও ভান আর্সেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পোল্ট্রি টেক বাংলাদেশ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় খাতকে শক্তিশালী করতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি, বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাস এবং নেতৃস্থানীয় ডাচ ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলির যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে পোল্ট্রিসহ খাদ্যে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দেশের কৃষক ও খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

ল্যারিভ ইন্টারন্যাশনাল এবং লাইটক্যাসল পার্টনারস এই দুই কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান অংশীদারের ভিত্তিতে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে গত কয়েক— বছর ধরে এ ধরনের প্রকল্প পরিচালনা ও বাস্তবায়নে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে রাষ্টদূত ইরমা ভ্যান ডুরেন বলেন, নেদারল্যান্ডের সামগ্রিক কৃষিখাতে উন্নতির খ্যাতি রয়েছে এবং আমরা বহু দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। নওরিশ সাসো পরীক্ষামূলক ফার্মের প্রযুক্তিগত দিক এবং পোল্ট্রি টেক বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম কীভাবে বাংলাদেশে পোল্ট্রির ভ্যালু চেইনের মাধ্যমে সামগ্রিক পুষ্টিখাতকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে সে সম্পর্কে জানতে পেরে আমি আনন্দিত।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ড্রাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ পোল্ট্রি খামার আছে। এছাড়া এ শিল্প গ্রামীণ পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক নারীসহ অনেক মানুষের কর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দেশে পোল্ট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২৫ লাখ এবং ৬০ লাখ শ্রমিক জড়িত। এ প্রেক্ষাপটে নতুন জাতের মুরগিসহ পশু-প্রাণীর উদ্ভাবন ও খামারিদের প্রযুত্তিগত সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তরা এগিয়ে এলে এ শিল্প আরও বিকশিত হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩