প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমরা জানি ধান ভাঙানোর পর চাল ও তুষ আলাদা হয়ে যায়। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের কারণে ধানের সেই তুষ পুড়িয়ে উৎপাদন হচ্ছে বিদুৎ।

উৎপাদিত বিদুৎ দিয়ে চলছে পুরো কারখানা। সেই হিসেবে মাছের তেলে মাছ ভাজার মতো উদাহরণ বলা চলে। শুধু তাই নয়, তুষ পোড়া ছাই প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হচ্ছে সিলিকন ডাই–অক্সাইড বা সিলিকা পাউডার। গাড়ির টায়ার, টুথপেস্ট, প্রসাধনী, রংসহ নানা শিল্পে ব্যবহার হয় এই পাউডার।

সিলিকায় আমরা এখনো পুরোটাই আমদানিনির্ভর। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের ‘সাসটেইনেবল এনার্জি অ্যান্ড এগ্রো রিসোর্স লিমিটেড (সিল) ’ সম্ভাবনার বার্তা দিচ্ছে। তাদের দাবি, দেশে তারাই প্রথম ধানের তুষ পুড়িয়ে সিলিকা উৎপাদন করছে। শুধু তা–ই না, উৎপাদিত সেই সিলিকা বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহও করছে।

কারখানাটি ঘুরে দেখা গেল, প্রথমে ধানের তুষকে গ্যাসিফায়ারে পোড়ানো হচ্ছে। ধানের তুষ পোড়ানোর ফলে যে ধোঁয়া হচ্ছে, তা গ্যাসে রূপান্তরিত করে গ্যাস জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর সিলিকা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তুষের ছাই।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, সরকার এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ালেই তুষ থেকে সিলিকা উৎপাদনে বাংলাদেশ যেকোনো দেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তুষ থেকে সিলিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেল, ধানের তুষ পোড়ানের পর যে ছাই পাওয়া যায় তা ডাইজেস্টারের মাধ্যমে কস্টিক সোডা ও মিনারেল পানি দিয়ে ডাইজেশন (অনবরত নাড়ানো) করা হয়। প্রক্রিয়াটি এক থেকে দেড় ঘণ্টা চালানো হয়। সেখানে যে মিশ্রণটি পাওয়া যায়, তা প্রেস ফিল্টারে (চাপ প্রয়োগ মেশিন) নিয়ে প্রেস করা হয়।

সেখান থেকে সোডিয়াম সিলিকেট পাওয়া যায়। সোডিয়াম সিলিকেট চলে যায় রিঅ্যাকটর মেশিনে। সেখানে কার্বন ডাই–অক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তৈরি হয় তরল সিলিকন ডাই–অক্সাইড। তরল পদার্থটি দুই থেকে তিন মাইক্রন ছাঁকনি দ্বারা ছেকে নেওয়া হয়। ছাঁকনি থেকে প্রাপ্ত বর্জ্যটি ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে সিলিকন ডাই–অক্সাইড পাউডার তৈরি করে বাজারজাত করা হয়।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত কারখানাটি ২০২০ সালে উৎপাদন শুরু করে। তবে করোনার সময় উৎপাদন বন্ধ ছিল। মহামারির ধকল কাটিয়ে চলতি বছরের মার্চে আবার উৎপাদন শুরু করে। শুরুতে প্রতিদিন ৫০০ কেজি সিলিকা উৎপাদন হলেও এখন তা বেড়ে প্রায় এক হাজার কেজিতে পৌঁছেছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানাল, দেশে উৎপাদিত ধান থেকে বছরে সাড়ে ৭৫ লাখ মেট্রিক টন তুষ পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই বিভিন্ন বয়লারে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। এই তুষ সিলিকা তৈরির কাজে লাগাতে পারলে অন্যতম ‍সিলিকা উৎপাদক দেশের স্বীকৃতি পেতে পারে বাংলাদেশ। এতে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে, তেমনি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিও সম্ভব হবে।

প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার আবুল ফজল বলেন, ধানের তুষ থেকে সিলিকা উৎপাদনের আর কোনো কারখানা দেশে নেই। এটাই প্রথম। পাশাপাশি ধানের তুষ পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনও দেশে এই প্রথম। এটা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। যে গ্যাস জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, সেটা থেকে যে কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, তা কিন্তু বাতাসে ছাড়ছি না।

সেটা দিয়ে সিলিকা তৈরি করছি। আমাদের উৎপাদিত সিলিকা বিশ্বমানের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) পরীক্ষা করে প্রমাণও পেয়েছি। ধানের তুষ পুড়িয়ে বিদুৎ উৎপাদন সংবাদের তথ্য প্রথম আলো থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ