নওগাঁয় খালের অভাবে পানির নিচে ফসলি জমি। ছবি: ইউসুফ আলী সুমন

ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর বদলগাছীতে একটি খালের (ক্যানেল) অভাবে প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমির ফসল প্রতি বছর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মাঠের বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি আবাদি জমি এখন এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি খাল খনন ও খালের উত্তর পাশ দিয়ে ভ্যান চলাচলের রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, উপজেলার কোলা ইউনিয়নের গহেরা, বনগ্রাম, শ্যামার, কেশাইল, গাড়াকন্দ, চকের মাঠ এবং কয়াভবানিসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমির ফসলি মাঠ যেখানে ইরিবোরো, আমন ও সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এই মাঠের পানি নামার কোনো পথ না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

নকশায় কয়াভবানিপুর গ্রাম থেকে ভাঙাগাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ফুট দূরত্বে সরকারি রাস্তা রয়েছে। নকশায় রাস্তা থাকলেও তা বাস্তবে নেই। রাস্তার পাশের জমির মালিকরা গত ৫০-৬০ বছর থেকে তা দখলে নিয়ে আবাদ করছেন। বেজ্রা ব্রিজ থেকে দক্ষিণে ১৫-১৬ ফুট প্রস্থের প্রায় ৪শ ফুট জমি অধিগ্রহণ করা হলে ওই সরকারি রাস্তায় গিয়ে মিলিত হবে। ওই রাস্তাটি দখলমুক্ত এবং জমি অধিগ্রহণ করে একটি খাল খনন করা হলে কয়েকটি মাঠের পানি হাস্তা বিলের ভাঙাগাড়ি দিয়ে তুলশিগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়বে। এতে মাঠের জলাবদ্ধতা দূর হয়ে তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। এছাড়া মাঠের ফসল ঘরে ওঠানোর জন্য খালের উত্তর পাশ দিয়ে ভ্যান চলাচলের রাস্তারও প্রয়োজন।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে কৃষি ঋণ বিতরণের গতি বেড়েছে

নওগাঁয় আগাম সিমে লাভবান চাষীরা

গহেরা গ্রামের কৃষক সোহেল বলেন, বনগ্রামের মাঠে তার প্রায় ১৮ বিঘা ফসলি জমি আছে। এরমধ্যে কয়েক বিঘা জমিতে প্রতি বছর পটল, মরিচ ও বেগুনের আবাদ এবং কিছু জমিতে পাটের আবাদ করে থাকেন। প্রতি বছর বৃষ্টির পানিতে এ মাঠটি প্লাবিত হয়। পানি নামার জায়গা না থাকায় তার সবজিক্ষেতগুলো ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর বৃষ্টির পরিমাণও বেশি। পাটের জমিতে পানি জমা হয়ে থাকায় তা নষ্ট হয়ে গেছে।

তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক মিঠু, মতিউর, আলেফ উদ্দিন, বনগ্রাম গ্রামের কৃষক সারোয়ার, আসলামসহ কয়েকজন বলেন, এক সময় মাঠগুলোতে তিন ফসল হতো। বৃষ্টির পর পানি নেমেও যেত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে আর পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতায় জমি ডুবে থাকায় আমন ধানের আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়াভবানিপুর গ্রাম থেকে ভাঙাগাড়ি পর্যন্ত নকশার রাস্তাটি দখলমুক্ত করে খাল খনন করা হলে তুলশিগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়বে। এতে করে পানি দ্রুত অপসারণ হবে। আবারও জমিতে তিন ফসলের আবাদ হবে।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু তাহির বলেন, ইতোপূর্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে সরকারি একটি রাস্তা রয়েছে যা স্থানীয়রা দখল করে রেখেছেন। রোববার সার্ভেয়ার পাঠিয়ে জরিপ করা হয়েছে। রাস্তার জায়গাটি ছেড়ে দিতে দখলকারীদের নোটিশ করা হবে। এরপর খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হবে। আশা করছি শিগগিরই জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ