ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় আগাম জাতের শিম চাষে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। বন্যার কারণে এবার অন্যান্য শাকসবজির আবাদ কম হলেও আগাম শিমের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে মিলছে আশানুরূপ দাম পাওয়ায় খুশি তারা।

শিমের আবাদ কৃষকদের কাছে ভাদ্রা শিম (ভাদ্র মাসের শিম) নামে পরিচিত। তবে শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। চাষিরা জানান, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে শিম গাছে পোকা এবং পচার আক্রমণ বেশি হচ্ছে। আগাম জাতের এই শিম চাষে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কীটনাশক কিনতেই।

সবুজ পাতার মধ্যে লকলক করছে শিমের শীষ। আর শীষে ধরে আছে বেগুনী ও হালকা সাদা রঙের ফুল। কিছু কিছু শীষে উঁকি দিচ্ছে শিম। এরই মধ্যে নওগাঁর বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের নতুন শিম। দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তবে, লাভের একটা বড় অংশই চলে যাচ্ছে পোকা দমনে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আগাম জাতের শিমের মধ্যে কার্তিকা, কাজলা ও চালতা বেশি চাষ হয়েছে।

সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের শিম চাষি মো. রেজা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, তিনি ৫ কাঠা জমিতে আগাম শিমের আবাদ করেছেন। এ পরিমাণ জমিতে শিমের আবাদ করতে তার প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে শিম তোলা শুরু হবে। প্রথম দিকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। যখন শিম বেশি ওঠা শুরু হয় তখন দাম একটু কম হয়। তারপরও সর্বনিম্ন ৪০০-৫০০ টাকা মণ বিক্রি হয়। প্রতি সপ্তাহে একমণ করে শিম উঠবে। সে হিসাবে মাসে চার মণ। আর দাম পাওয়া যাবে প্রায় ১২-১৫ হাজার টাকা।

নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর গ্রামের আলম হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, সাত দিন আগে ক্ষেত থেকে পাঁচ কেজি শিম তুলেছেন। পাইকারি বিক্রি করেছেন ১২০ টাকা কেজি। বাজারে শিমের পরিমাণ সরবরাহ কম হওয়ায় দামও তুলনামূলক বেশি। ভালো দামের আশায় আগাম জাতের শিমের আবাদ করা হয়। আমি ১বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছি। জৈষ্ঠ্য মাসে শিমের বীজ রোপন করা হয়।

শ্রাবন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আগাম শিম তোলা শুরু হয়। শ্রাবন মাস থেকে চৈত্য মাস পর্যন্ত এ শিম সংগ্রহ করা যায়। প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬বার শিম উঠানো যায়। ফলন ভালো হলে প্রতিবার ৪ থেকে ৫মন সিম উঠানো যায়।

তিনি আরোও বলেন, প্রতি বিঘায় কিটনাশক, সার, সেচ,জমি নিরানিসহ ২০ থেকে ৩০হাজার টাকা খরচ হয়। তবে এবার ফলন ভালো হলে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০ থেকে ৫০হাজার টাকা লাভের আশা করছি।

সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের কসবা গ্রামের মো. সাজু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আগাম শিম তুলতে শুরু করেছেন। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনি চাহিদাও বেশি থাকে। আগাম শিম চাষে লাভবান হওয়া যায়। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে সংসারের অভাব দূর হচ্ছে। তার এ সাফল্যে গ্রামের অন্য কৃষরা আগাম শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, উপজেলার বর্ষাইল, র্কীত্তিপুর ও বক্তারপুর ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ সবজির আবাদ হয়ে থাকে। ধানের পরিবর্তে তারা বেশি লাভের আশায় সবজির আবাদ করে থাকেন। আগাম শিমের আবাদ করায় কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

নওগাঁয় শিম চাষে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। শিম চাষ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, নওগাঁ জেলায় এবার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিমের আবাদ হয়েছে। রোগ বালাই প্রতিরোধে কৃষকদের সব সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আগামীতে জেলায় এ জাতের শিমের আবাদ আরো বাড়বে বলেও আশাবাদী এই কর্মকর্তা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ