নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নতুন তিন জাতের ব্রি ধান অবমুক্ত হয়েছে। নতুন এ ধানের জাতগুলো সময় ও যুগপোযোগী বলে সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন। এখন থেকে এসব জাতের ধান মাঠে চাষ করতে পারবেন চাষিরা।

আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) জাতীয় বীজবোর্ড এর ১০৮তম সভায় অনুমোদন দেয়া হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর উদ্ভাবিত নতুন তিন জাতের ধানের। এগুলো হলো ব্রি ধান১০৩ আমন মওসুমের, বাসমতি টাইপের সুগন্ধি জাত ব্রি ধান১০৪ ও ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ বোরো মৌসুমের জন্য।

ব্রি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সন্মেলন কক্ষে জাতীয় বীজবোর্ড এর সভাপতি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই জাতগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর সংস্থার প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৩ আমন মওসুমের একটি জাত। জাতটির কৌলিক সারি BR (Bio) 8961-AC26-16। ব্রি ধান২৯ এর সাথে FL378 এর সংকরায়ণ করা এবং পরবর্তীতে  F1 generation এ এ্যন্থার কালচার পদ্ধতি (জীব প্রযুক্তি) ব্যবহার করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।

এ জাতটির পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি। ডিগ পাতা খাড়া। দানা লম্বা ও চিকন। ১০০০ পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.৭ গ্রাম। ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪%। এ জাতটির গড় জীবন কাল ১৩২ দিন। এ জাতটির গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.২ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৮.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

ব্রি ধান১০৪ এর কৌলিক সারি বিআর৮৮৬২-২৯-১-৫-১-৩। কৌলিক সারিটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) তে ২০০৭ সালে আইআর৭৪০৫২-২১৭-৩-৩ এর সাথে বিআর৭১৫০-১১-৭-৪-২-১৬ এর সংকরায়ণ করে এবং পরবর্তীতে বংশানুক্রম সিলেকশন (Pedigree Selection) এর মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়।

ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচন করা হয় এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি পাঁচ বৎসর ফলন পরীক্ষার পর ২০১৯ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।

এরপর ২০২১ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক সুপারিশের পর জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮-তম সভায় বোরো মওসুমের উন্নত গুণাগুনসম্পন্ন জাত হিসাবে ছাড়করণের সিদ্ধান্ত গুহীত হয়।

ব্রি ধান১০৪ এ আধুনিক উফশী ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, পাতার রং সবুজ। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৯২ সে. মি.। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। এ জাতের ধান বাসমতি টাইপের তীব্র সুগন্ধী যুক্ত।

এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। এ জাতের জীবনকাল ব্রি ধান৫০ এর প্রায় সমান। এ ধানের গুনগত মান ভাল অর্থাৎ চালের আকার আকৃতি অতি লম্বা ও চিকন (Extra Long Slender) (৭.৫ মি.মি. লম্বা) এবং রং সাদা। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলে ব্রি ধান৫০ এর চেয়ে ব্রি ধান১০৪ এর ফলন প্রায় ১১.৩৩% বেশী পাওয়া গেছে এর মধ্যে শীর্ষ ছয় স্থানে এটি ব্রি ধান৫০ এর চেয়ে ১৭.৯৪% বেশি ফলন দিয়েছে।

এ জাতটি বাসমতি টাইপের ব্রির একমাত্র সুগন্ধী ধানের জাত। এ জাতের হেক্টরে গড় ফলন ৭.২৯ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৮.৭১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম ।

ব্রি হাইব্রিড ধান৮ বোরো মওসুমের জাত। জাতটির গাছের উচ্চতা ১১০-১১৫ সেমি। প্রতি গোছায় গড় কুশির সংখ্যা ১০-১২ টি। দানার পুষ্টতা ৮৮.৬ %। জীবনকাল ১৪৫-১৪৮ দিন। ফলন প্রতি হেক্টরে ১০.৫-১১ মে.টন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নতুন তিন জাতের ব্রি ধান অবমুক্ত হওয়ায় ধান উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।