ফাইল ছবি

ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের দোশতীনা গ্রামের সৌখিন কৃষক আশরাফুল ইসলাম বশিরের বাড়িতে ধান দেখতে ভিড় জমাচ্ছে মানুষ। দেশে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন প্রায় তিনগুণ। বলছি, ফাতেমা নামক ধানের কথা। তার মায়ের নামানুসারে নাম না জানা এই ধানের নাম রাখেন‘ফাতেমা ধান’। এই ধানের ফলন বিঘায় ৫০ মণ বলে জানা গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এত অধিক ফলনশীল জাতের ধান দেশের আর কোথাও আছে বলে তাদের জানা নেই। ‘ফাতেমা’ জাতের এই ধান কোনজাতের এবং কোথা থেকে কিভাবে এলো এসব জানতে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়নকরপোরেশন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো এর জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বশির জানান, অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিনমৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসূমে এর উৎপাদনসবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ফিট যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানেরশীষে ৭৫০-১০০০টি করে ধান হয়। সাধারণ ধানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণবেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। চলতি মৌসূমে তিনি দেড় বিঘাজমিতে প্রায় ৭৫মণ ধান পেয়েছেন। এধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হারতুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

বশির পেশায় নওগাঁ জজ কোর্টের একজন আইনজীবি। একই সঙ্গে আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপকআগ্রহ। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনেতিনি সাফল্য পেয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

তিনি জানান, বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধানকাটা যায়। এই ধান ঝড়, খড়া এবং লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটিধানগাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি,প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা একহাজারের ওপরে।

জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নেরচাকুলিয়া গ্রামে লেবুয়াত শেখ (৪০) নিজেদের জমিতে ২০১৬ সালে প্রথমওই ধান চাষ করেন। ওই বছর বোরো মৌসুমে তাঁর বাড়ির পাশে জমিতেহাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতেরধানের শীষ তিনি দেখতে পান।

ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড়এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষতিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করে এ ধান চাষ শুরু করেন।

বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষক লিটন, রঞ্জু, মামুন, আতাব আলী জানান, অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তারা কৃষক বশিরের এ ধান দেখতে এসেছেনএবং তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামীতে তারা এ ধান চাষকরবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ওই ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতেপারে। এত বেশি ফলন পাওয়া যায়, এমন কোনো জাতের ধান দেশে আছে বলেআমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এই ধান খড়া ও লবণ সহ্যকারী এবংসারাদেশে চাষের উপযোগী। মনে হচ্ছে, সারা দেশে ওই ধান চাষ করা যাবে।এই ধান যদি সারা দেশে চাষ করা যায় তাহলে বার্ষিক উৎপাদন পাঁচকোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।’

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ