মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: সবজির জমিতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হলে লোকসানের শেষ থাকে না কৃষকের। কয়েকদিন পানি বদ্ধ হয়ে থাকলেই গাছের গোড়া পচে যায়। সেই ঝামেলা থেকে বাঁচতে অনেক কৃষক এবার নতুন পদ্ধতি বা মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবর্তন হতে চলেছে চাষাবাদের ধরণ। আবার শীতকালের ফসলও হচ্ছে বর্ষাকালে। কৃষিজীবিরা বাড়তি লাভের আশায় অসময়ের ফসলও চাষ করছেন। এবারে জেলার গোদাগাড়ী, পবা, তানোর, চারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন পদ্ধতিতে শীতের সবজি চাষ করছেন।

কৃষকরা বলছেন, মালচিং মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেয়া হয় তখন তাকে বলে মালচ। আর এ পদ্ধতিটি কে বলে মালচিং। চাষে বাণিজ্য ও আধুনিকীকরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক মালচিং-এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে।

পড়তে পারেন: ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ৫ গুণ বেশি ফলন

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়। বিগত আট বছরে রাজশাহী জেলায় সবজি চাষ বেড়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪১৬ মেট্রিকটন। এসব সবজি রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় রপ্তানি করা হয়।

চারাগুলোতে পানির হাত থেকে বাঁচাতে জমিতে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে পলিথিন। নিদিষ্ট দুরত্বে সেই পলিথিনের ফুটো দিয়েই বেগুনের চারাগুলো বের করা হয়েছে। চারাগুলোকে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় অনেক চাষি এবারে এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এ অঞ্চলে অনেক পরিবার শুধু সবজি চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করে।

এখানকার কয়েকজন সবজি চাষি জানান, প্রতি বছর লাগাতার বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্ষার পানির কারণে অনেক চাষি ক্ষতির মুখে পড়েন। সে জন্য এবার তারা এ পদ্ধতিতে বেগুন চারা লাগিয়েছেন।

পড়তে পারেন: যেভাবে বেগুন চাষে শতভাগ সফলতা আসে

গোদাগাড়ীর সবজি চাষি আমজাদ হোসেন জানান, প্রথমে বেগুনের সারি করা হয়। এরপরে জমিতে পলিথিন বিছিয়ে দেয়া হয়। সেই পলিথিন ফুটো করে নির্দিষ্ট দুরে দুরে বেগুনের চারা লাগানো হয়। এতে চারার গোড়াতে বৃষ্টির পানি জমে না। পলিথিনের উপর দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নেমে যায়।

এই এলাকার আরেক কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এবারেই তারা নতুন এ পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করছেন। বর্ষা পুরো নামেনি। তবে যেটুকু বৃষ্টি হয়েছে তাকে কোন ক্ষতি হয়নি বেগুন গাছের।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: মোজদার হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীতে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ হচ্ছে। বেগু, টমেটো, কাঁচামরিচসহ বেশ কয়েকটি সবজিতে মালচিং করা হচ্ছে।

এ পদ্ধতির সুবিধে তুলে ধরে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, মালচিং পদ্ধতি মূলত ঘাস ঠেকাতে করা হয়ে থাকে। শ্রমিক খরচের টাকা বাঁচাতে মালচিং করছেন চাষিরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ