সজিবুল হৃদয়, নাটোর (লালপুর): নাটোরের বিভিন্ন বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল টুকটুকে লিচু। চলতি মৌসুমে ৪০০ টাকা কেজি হিসাবে জেলায় প্রায় ৩০০ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার লিচু বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় ৯২৪ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। এতে লিচুর উৎপাদন ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৯৭ মেট্রিক টন বা ৭৫ লাখ ২ হাজার ১৫০ কেজি। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি লিচু উৎপাদন হয়েছে। গতবছর ৯৮৩ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল।

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে লিচু চাষিদের পকেটে ঢুকবে ৩১ কোটি টাকা

এবছর উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, লিচু চাষের সদর উপজেলায় চাষ হয়েছে ১৬০ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গা উপজেলায় চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছে ৯০ মেট্রিক টন, সিংড়া উপজেলায় চাষ হয়েছে ৯৮ হেক্টর, উৎপাদন ৭৮৪ মেট্রিক টন, গুরুদাসপুর উপজেলায় চাষ হয়েছে ৪১০ হেক্টর, উৎপাদন ৩ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রাম উপজেলায় চাষ হয়েছে ৪০ হেক্টর, উৎপাদন ৩২০ মেট্রিক টন, লালপুর উপজেলায় চাষ হয়েছে ১০৫ হেক্টর, উৎপাদন ৮২৫ মেট্রিক টন এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় চাষ হয়েছে ৯৬ হেক্টর, উৎপাদন হয়েছে ৭৬৮ মেট্রিক টন।

স্থানীয় লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনুকূল আবহাওয়ায় এ বছর নাটোরে লিচুর বাগানে থোকায় থোকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। সেইসাথে লিচুর আকার ও রং বেশ লোভনীয়। মিষ্টি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। ক্রেতাদের কাছে বর্তমানে লিচুর চাহিদা তুঙ্গে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই খুশি।

পড়তে পারেন: রাজশাহীর বাজারে লিচুর শ ১৬০ টাকা

বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা এলাকার লিচু চাষি হযরত আলী জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে বোম্বাই জাতের লিচু চাষ করেছেন। এ বছর লিচুর প্রচুর ফলন হয়েছে। পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বাগান থেকে তিনি প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।

এ উপজেলার বড় বাঘা এলাকার আরেক লিচু চাষি হামিদুর রহমান জানান, ৮ বিঘা জমিতে লিচু বাগান করেছেন তিনি। প্রতিটি গাছেই পর্যাপ্ত লিচু এসেছে। বিগত সময়ে লিচুর এতো ফলন পান নি তিনি।

এদিকে জেলার লিচুর রাজ্য খ্যাত গুরুদাসপুরের লিচুর আড়তগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লিচু চাষি, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরগরম রয়েছে। শুধু এই আড়তগুলোতে প্রতিদিন ৫০-৬০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছন ব্যবসায়ীরা।

পড়তে পারেন: আম-লিচুর ফল ফেটে যাচ্ছে! করণীয় জানুন

এ উপজেলার নাজিরপুর আড়ত কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন জানান, লিচুর হাটকে ঘিরে ১৭টি আড়ত রয়েছে। লিচুর আমদানি পর্যাপ্ত রয়েছে। প্রতিদিন এখানে গড়ে ৫০-৬০ লাখ টাকার লিচু বেচাকেনা হচ্ছে।

নোয়াখালি থেকে লিচু কিনতে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, এখানকার বোম্বাই লিচু আকারে বড় ও রসালো মিষ্টি হওয়ায় এলাকায় এর চাহিদা প্রচুর রয়েছে। প্রতি বছর এ উপজেলা থেকে লিচু কিনে নিয়ে যায়। তিনি প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার লিচু নোয়াখালীতে পাঠান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, এ বছর নাটোরে আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। কৃষকরা লিচুর ভালো দাম পাচ্ছেন। এবার গত বছরের তুলনায় লিচুর চাষ কম হলেও লিচুর গাছে থোকায় থোকায় লিচুর ফলন হওয়ায় উৎপাদন লক্ষমাত্রা বিগত সময়কে ছাড়িয়ে যাবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ