নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানের বাস্তবতা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারী ও কন্যা শিশুর খাদ্য এবং পুষ্টির নিরপত্তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নারী ও কন্যা শিশুদের খাদ্য পরিস্থিতি এবং খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।

‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’-এর সুপারিশ: প্রধান প্রধান দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাসহ দারিদ্র্য বিমোচনে বহুমুখী (শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি) কর্মসূচি গ্রহণ; উপরোক্ত কর্মসূচিসমূহের অধীনে নারী ও শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ (Control of vitamin-A deficiency disorder Programme (VAD), Iodine deficiency disorder (IDD), Control of Iron deficiency Anemia (IDA).

নীতিমালা অনুযায়ী সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঠিক উপকারভোগী নির্বাচন নিশ্চিত করা; যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় খাদ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং বরাদ্দ অনুযায়ী উপকারভোগীদের খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদানসহ সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

পাশাপাশি, সব মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি সেবামূলক নিয়ম অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেখা দরকার এবং এ লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহে খাদ্য অধিকার-এর প্রাসঙ্গিকতা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ- সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কানিজ ফাতেমা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে নারী ও কন্যা শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে ফুড সিকিউরিটি নিউট্রিশনাল সার্ভেলেন্স প্রোগ্রাম (এফএসএনএসপি) -এর জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দেশে বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতি কিশোরীর হার ৩২ শতাংশ, খর্বাকৃতি নারীর হার ৪২ শতাংশ, খাদ্যে কম অনুপুষ্টি উপাদান গ্রহণকারী নারীর হার ৬০ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদে শক্তির ঘাটতি আছে এমন নারীর হার ২৫ শতাংশ।

এছাড়া ‘গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট ২০১৬: ফ্রম প্রমিজ টু ইমপ্যাক্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪৪ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। বিশ্বব্যাপী নারীর রক্তস্বল্পতা কম থেকে বেশির যে ক্রম, সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৮ এবং ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯।

ডব্লিউএফপি-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৫০% কন্যাশিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, যার মধ্যে প্রায় ৩৫% কম ওজন সম্পন্ন। এছাড়া ইউনিসেফ-এর আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চাদপদ দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে গর্ভকালীন নারীদের কম খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়, যাতে সিজার ছাড়াই নারী কম ওজনসম্পন্ন বাচ্চা প্রসব করতে পারে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর মতে, এমডিজি বাস্তবায়নকালে বাংলাদেশে খর্বতা, কৃশতা ও কম ওজনসম্পন্ন শিশুদের সংখ্যা কমলেও বিশ্বে অপুষ্টির হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, সকল মানুষের জন্য দৈনিক ২ হাজার ১২২ কিলো ক্যালরি খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে দারিদ্র্য এখনও অন্যতম বাধা। সেখানে অন্যান্য বিষয়ের মতো নারী ও কন্যা শিশুর খাদ্য পরিস্থিতি আরো নাজুক।

তারা বলেন, বিদ্যমান সামাজিক কাঠামো ও পশ্চাদপদ ধারণার কারণে আমাদের সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রে মায়েরা পরিবারের পুরুষ এবং ছেলে শিশুদের ভাল খাবারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন এবং কন্যাশিশুদের খাইয়ে যা অবশিষ্ট খাকে তাই খান অথবা কোন কোন সময় অভূক্ত থাকেন।

এরকম বাস্তবতায়, নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় বয়ঃসন্ধিকাল, যৌবনকালসহ সব বয়সে প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না; যে কারণে নারীর পুষ্টিহীনতার হার হ্রাস আশাব্যঞ্জক নয়। সামাজিকভাবে নারীর প্রতি অধস্তন দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেও নারী ও কন্যা শিশুরা চাহিদা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ও পুষ্টি পায় না।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম এমপি উপস্থিত ছিলেন। ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ -এর ভাইস-চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী রওশন আক্তার এবং সম্মানীয় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল করীম এনডিসি, যুগ্ন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ- ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফারাহ কবীর, দেশীয় পরিচালক, একশন এইড বাংলাদেশ এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ-এর দেশীয় পরিচালক সাকেব নবী।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, প্র্যাকটিকাল একশন, বাউসি, ইফ্রি, ক্রিশ্চিয়ান এইড, ডব্লিউএফপি, বিউইকে, এফএও, বাস্তবসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এর প্রতিনিধিগণ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।