কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মেহেরপুর, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষি সম্প্রসারণ কাজে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে গোটা দেশকে ১৪টি কৃষি অঞ্চলে বিভক্ত করে কৃষির অত্যাধুনিক লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি সম্প্রসারণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা ডিএই।

১৪টি কৃষি অঞ্চলের মধ্যে অত্যন্ত কৃষি সমৃদ্ধ এবং খাদ্য উদ্বৃত্ত হচ্ছে যশোর অঞ্চল যার আওতায় যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদাহ্, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই ৬টি জেলা রয়েছে। যশোর অঞ্চলে সকল ধরনের মাঠ ফসল থেকে শুরু করে ফুল ফল শাক-সবজি জন্মে থাকে।

ফুলের রাজধানীর এই যশোরে জেলাতে। গোটা বছর এই অঞ্চলে থাকে সবুজের সমারোহ। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ছায়া সুনিবিড় চিরায়ত বাংলার যে মুখচ্ছবি কবি সাহিত্যকদের লেখনীতে উঠে এসেছে তার সব কিছুর অপূর্ব সংমিশ্রণ রয়েছে এই যশোর অঞ্চলে।

তাই শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক ও গীতিকার ড. মনিরুজ্জামানের বাংলার রূপের এমন বর্ননার সবটার দেখা মেলে যশোর অঞ্চলে:

“আমার দেশের মাটির গন্ধে
ভরে আছে সারা মন
শ্যামল কোমল হরষ ছাড়া যে
নেই কিছু প্রয়োজন।।
প্রাণে প্রাণে যেন তাই
তারই সুর শুধু পাই
দিগন্ত জুড়ে সোনা রঙ ছবি
এঁকে যাই সারাক্ষণ।”

যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ কাজের গতিধারাকে বেগবান ও সচল করবার জন্যে দু’বছরেরও বেশি সময় যাবত নিরলসভাবে অত্যন্ত প্রত্যুৎপন্নমতিতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের পথিকৃৎ কৃষিবিদ চন্ডী দাস কুন্ডু স্যার।

বয়সের বাঁধাকে তুচ্ছ করে প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াচ্ছেন যশোর অঞ্চলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কারিগরী জ্ঞান দক্ষতা মেধা মননশীলতার কোন কমতি নেই স্যারের মধ্যে। সদা হাস্যময় প্রাণচাঞ্চল্যে উৎফুল্ল সজ্জ্বন আর সাদা মনের এই মানুষটি সর্বস্তরের জনমানুষ সহ কৃষকের সাথে অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার করেন।

তাঁর অধীন যশোর অঞ্চলের সকল কর্মী বাহিনীকে তিনি সব সময় ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তাঁরই সফল নেতৃত্বে এ বছর যশোর অঞ্চলে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হয়েছে।

আউশ ধান আবাদের শতভাগ সফলতার পরে তিনি সকল জেলা উপজেলাকে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিভাগীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে তিনি চলতি মাসের ০৪ তারিখে তাঁর কার্যালয়ের ৮০৪ নং স্মারক পত্রে সকল উপজেলা কৃষি অফিসারদের লিখিত তাগিদপত্র দিয়েছেন, যার সারসংক্ষেপ নিচে দেয়া হলো:

সদাশয় সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমন ধানের আবাদ বাড়ানো তাই এটাতে কোন ব্যর্তয় করা যাবে না। ভাল বীজ থেকে আদর্শ বীজতলায় উৎপাদিত চারা দিয়ে ধান রোপন করতে হবে।

জৈব সার সহ সুষম সার ব্যবহার করতে হবে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে রোগ পোকামাকড় দমন করতে হবে। ধান রোপনের ক্ষেত্রে অবশ্যই লাইন ও লগো করতে হবে। শতভাগ পার্চিং (ডেড/লাইভ) নিশ্চিত করতে হবে।

পার্চিং সফলতায় এনএটিপি’র সিআইজি গ্রুপকে কাজে লাগাতে হবে। বাদামী গাছ ফড়িং, নলিমাছি ও ব্লাস্ট দমনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। লাইট ট্রাপ দিয়ে পোকা দমন সহ বাদামী গাছ ফড়িং এর মনিটরিং করতে হবে।লক্ষ্যণীয় যে, অক্টোবর মাস বিপিএইচ এর জন্য অত্যন্ত খারাপ মাস।

পোকা মাকড় দমনে পরিবেশের উপরে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী বালাইনাশক ভিরতাকো ও ভলিউম ফ্লেক্সি ব্যবহার না করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি নির্বিঘ্নে রোপা আমনের ফলন ঘরে তোলার জন্যে সকল ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।

এতদ্ব্যতীত অতিরিক্ত পরিচালক স্যার আরো কতকগুলো পরামর্শ প্রদান করেন: রোগ বা পোকা লাগে সে ব্যাপারে রিপোর্ট দ্রুত উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। বৃষ্টিপাত সহ সকল অনলাইন রিপোর্ট সকালের মধ্যে দিতে হবে। সকল মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

ফসলের আবাদ ও ফলনের পরিসংখ্যান প্রদানের সময় পরিসংখ্যান দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে। নিজের জেলা বা উপজেলা ভিত্তিক ছোট ছোট কর্মসূচী প্রণয়নের জন্যে চেষ্টা করতে হবে।