পঞ্চগড় প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে অধিক ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় গমের পরিবর্তে এখন ভূট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। মাটি ও আবহাওয়া গম আবাদের জন্য বেশ উপযোগী হলেও পঞ্চগড়ে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে অন্যতম অর্থকরি ফসল গমের আবাদ।

গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে জেলায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ কমেছে অপরদিকে চার হাজার হোক্টর বেশি জমিতে ভুট্রা চাষ হয়েছে। একই খরচে গমের চেয়ে ভুট্রার দ্বিগুণ উৎপাদন হওয়ায় গম চাষের ওইসব জমিতে ভুট্রা চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ভুট্রা আবাদ করে কৃষকেরা দিন দিন বেশি লাভবান হওয়ায় আগামী মৌসুমে গম আবাদী জমির পরিমান আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের মোট পাঁচটি উপজেলায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে গম চাষ হয়েছিল ২৫ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। আর ভুট্রা চাষ হয়েছিল ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গম চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আর ভুট্রা চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।

চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জেলায় গম চাষের লক্ষমাত্রা ২৫ হাজার ৭০৭ হেক্টর হলেও চাষ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। অপরদিকে ভুট্রা চাষের লক্ষমাত্রা ১৭ হাজার ৭৭০ হেক্টর ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ২২ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে।

এদিকে সরেজমিনে কৃষকদের কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সময়ে ভূট্টার আবাদে ভালো ফলনের সাথে উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। পাশাপাশি উৎপাদনের তুলনায় গম আবাদে খরচ এবং পরিশ্রম বেশি লাগে।

এছাড়া অনেক সময় ভালো মানের গম বীজ পেতেও সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। এসব কারণেই মুলত জেলায় প্রতি বছর গমের আবাদ কমে যাচ্ছে। গম আবাদের উপযোগী জমিতে ভুট্রা চাষ করছেন কৃষকরা। এই মৌসূমে অন্য যে কোন ফসলের তুলনায় ভূট্টার ফলন বেশি হয়।

জেলার পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলার বিস্তৃর্ন এলাকার যে সকল জমিতে এক সময়ে গমের আবাদ করা হতো সেসব জমি এখন ভুট্রা আবাদে ভরে গেছে।

সদর উপজেলার ডুডুমারী এলাকার কৃষক রশিদুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘এবার আমি দুই একর জমিতে ভুট্রা চাষ করেছি। আমরা যেসব জমিতে এক সময় গম আবাদ করতাম সেই জমিগুলোতে এখন ভুট্রার আবাদ করছি। উৎপাদন খরচ একই হলেও গমের চেয়েও ভূট্টার ফলন দ্বিগুণ পাওয়া যায়। দিন দিন বাজারে ভূট্টার চাহিদাও বাড়ছে। এ কারণে আমরা উপযুক্ত দামও পাচ্ছি।’

জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মালিপাড়া এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমাদের এইসব জমিতে প্রতি বিঘায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মন পর্যন্ত ভুট্রা উৎপাদন করা যায়। প্রতি মন শুকনা ভুট্রা বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

অপর দিকে  প্রতি বিঘা জমিতে গম উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৫ মন। বাজারে প্রতি মন গম বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। এই লাভ-লোকসানের কথা বিবেচনা করে আমরা এখন গমের বদলে ভুট্রার আবাদ বেশি করছি।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া গম ও ভুট্রার আবাদের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে দীর্ঘদিন ধরেই গমের আবাদ করা হয়। তবে গত বারের তুলনায় এবার গমের আবাদ কমে গেলেও ভুট্রার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভূট্টার ফলন গমের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন হয়। উপযুক্ত দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া ভুট্রার পাশাপাশি জেলায় বোরো ধান ও উন্নত জাতের টমেটো আবাদ করেও কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। মুলত এসব কারণেই জেলায় গমের আবাদ কিছুটা কমেছে।