সঠিকভাবে আলুর জমি তৈরি

মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অপেক্ষাকৃত উঁচু ও বেলে মাটিতে আগাম আলুচাষের জন্য নেমেছেন রাজশাহীর চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই বাধা পড়লো সারে। জেলার তানোর, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার কৃষকরা এমওপি ও ডিএপি সার সংকটে পড়েছেন। এসব উপজেলার বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) সার ডিলার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে এমওপি (পটাশ) সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, আলুর মৌসুমে জমিতে সার প্রয়োগের সময় ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অধিক মুনাফার আশায় এমওপি ও ডিএপি সার মজুদ করে। সারের সংকট না থাকলেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। গুদামে সার জমা রেখে কৃষকদের দেয় না। ফলে কৃষকদের মধ্যে সার নিয়ে হাহাকার শুরু হয়। এ সুযোগে সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করে অধিক মুনাফা পেয়ে থাকেন ডিলাররা।

তানোর উপজেলায় প্রতি মৌসুমের ন্যায় সম্প্রতি এবারও প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক ৫ হাজার বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য জমি চাষাবাদে নেমেছেন। কিন্তু বীজ ও জমি প্রস্তুত থাকলেও এমওপি (পটাশ) ও ডিএপি সার সংকটে আলু বীজের চারা রোপণ করতে পারছেন না। এ নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

তানোর উপজেলা যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “প্রতি বছর ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কোল্ড স্টোরেজে এখন আমার ১২’শ বস্তা আলু আছে। বাজারে দাম ভালোই আছে কিন্তু পাইকারিতে দাম নাই। প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা দাম পেলে ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে আলু করব।

সারের সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারের সংকট আছে। এলাকার বড় বড় চাষি কৃষি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছি। তারা বিষয়টির সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। এখন যদি সার না পাওয়া যায়; সংকট থাকে তাহলে বেশি দামেই কিনতে হবে। সরকারের এইদিকে নজর দেওয়া দরকার

এদিকে বাঘা উপজেলার কলিগ্রাম এলাকার আলুচাষি আব্দুল হালিম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খোলাবাজারে ইউরিয়া টিএসপি সার পাওয়া গেলেও পটাশ ও ডিএপি সার মিলছে না; পাওয়া গেলে আবার দাম বেশি। ডিলারদের কাছে এসব সার কিনতে গেলে তারা সাপ্লাই নেই বলে ডিএপির বদলে টিএসপি সার নেয়ার জন্য কৃষকদের বাধ্য করছেন।

গোদাগাড়ি উপজেলার কুন্দালিয়া এলাকার আলুচাষি তরিকুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে সার বিক্রি হচ্ছে। সারের বাজার মনিটরিং কমিটির কোনো দেখা নাই। কৃষকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া শেষ হবে না

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। গত ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সারের তীব্র সংকট দেখা দেয়া বিষয়টি নজরে আসে তানোর উপজেলা থেকে। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা সারডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মাদ আলী বাবু জানান, সিন্ডিকেট নয় এমওপি (পটাশ) সারের কোনো সরবরাহ নেই। কিন্তু ডিএপির বদলে টিএসপি দিয়ে কৃষকদের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। তবে বেশি মূল্যে নয়, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সব ধরনের সার বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, এমওপি (পটাশ) ও ডিএপি সার চাহিদামতো সরবরাহ নেই। এজন্য সাময়িক সার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দুয়েক দিনের মধ্যে চাহিদামতো বরাদ্দ পেয়ে যাব।

এ ব্যাপারে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইউএনও পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই। জেলা কৃষি কর্মকর্তা কে জে এম আব্দুল আউয়াল জানান, সংকট দেখিয়ে কৃষকের কাছে সারের বেশি দাম নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ