আবু হাসাদ (রাজশাহী) পুঠিয়া প্রতিনিধি: পোল্ট্রি খাদ্য ও বাচ্চার মূল্যে বেড়ে লাগামহীন। সেই সাথে চিকিৎসা ও শ্রমিকের মুজুরি ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। অপরদিকে বাজারে মাংশ ও ডিমের দাম অনেক কম। এতে করে চরম লোকসানের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়ায় পোল্ট্রি খামারিরা।

গত এক বছরে প্রায় ৫ শতাধিক এর বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা ঋণের দায়ে পথে বসেছেন। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে মুরগি পালনের খামার গুলো। তবে ক্ষতিগ্রস্থ্যদের মধ্যে সল্প মূল্যে খাদ্য ও বাচ্চা সরবরাহ করা হলে আবারো পোল্ট্রি শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন খামরিরা।

মুরগির খামারি সৈয়দ আলী বলেন, গত তিন বছর আগে ব্যাংক ঋণ ও ধারদেনা করে উপজেলা সদর এলাকায় ৭ হাজার ৫০০ লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলে ছিলাম। সঠিক নিয়মে সার্বক্ষনিক তদারকিতে আশানুরুপ মুরগির ডিম শুরু হয়। কিন্তু করোনা প্রভাবের কারণে ডিমের বাজার কমে যায়। তার মধ্যে কোম্পানী মুরগির খাদ্যর দাম প্রতি বস্তায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। কয়েক মাস চালানোর পর খামার বন্ধ করতে হয়েছে।

এতে করে আমার প্রায় ৩৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আমার মত এরকম কয়েকশ’ খামারিরা পথে বসে গেছেন। তবে করোনার কারণে খামারিদের ভূর্তুকি দেয় সরকার। সে হিসাবে আমি মাত্র ২২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে ছিলাম। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ্য খামরিদের মধ্যে সল্প মূল্যে খাদ্য ও বাচ্চা সরবরাহ করা হলে আবারো পোল্ট্রি শিল্পে অনেক বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

ভালুকগাছি এলাকার জাকির হোসেন নামের অপর একজন খামারি বলেন, গত ৫ বছর আগে আমি ২ হাজার বয়লার মুরগির খামার করে ছিলাম। বাজারে বয়লারের মাংশের দাম কম হওয়ায় কয়েক দফা লোকসান গুনেছি। এরপর স্থানীয় একজন পোল্ট্রির খাবার ব্যবসায়ির পরামর্শে একটি কোম্পানীর সাথে বয়লার মুরগি পালনে চুক্তি করি। কোম্পানির চুক্তি মোতাবেক তারা বাচ্চা, খাদ্য ও চিকিৎসা বহণ করেন। আমি শুধু খামারে লালন-পালনের কাজ করি। এখন বেশী লাভ না হলেও লোকসান গুনতে হয় না।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, গত দেড় বছরে বাচ্চা, খাদ্য, মুরগির চিকিৎসা ও শ্রমিকের মুজরির ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। অথচ মুরগির ডিম বা মাংশের দাম তুলনামূলক অনেক কম। এখন আগের মত মুরগি পালনে তেমন একটা লাভজনক নয়। অধিকাংশ খামারিরা ঋণগ্রস্থ্য হয়ে পথে বসেছেন। পুরো উপজেলা জুড়ে কয়েক‘শ খামাড় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। অনেক ব্যবসায়িরা পোল্ট্রির ছেড়ে অন্য ব্যবসা করছেন। এর মধ্যে কিছু খামারিরা কোম্পানির সাথে চুক্তিতে বয়লার ও সোনালী মুরগি পালন করছেন। আর হাতে গোনা দুই চারজনের লেয়ার মুরগি খামার রয়েছে।

উপজেলা সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোতাসিম বিল্লাহ বলেন, উপজেলায় বয়লার, লেয়ার ও সোনালী মিলে তালিকাভূক্ত মোট সাড়ে ৫০০ খামারি রয়েছেন। তবে তালিকার বাহিরে দুই চারজন খামারি থাকতে পারেন। করোনা মহামারির প্রভাবের কারণে অনেক খামারির লোকসান হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা প্রথম দফায় ৬০০ জন খামারির নাম তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ৫৭৬ জন খামারিকে আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। এতে খামারের মুরগি অনুপাতে ১০ হাজার ৮০০ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভূর্তুকি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় ৩৩৫ জন খামারিকে অনুদান দেয়ার কার্যক্রম চলছে। এরপর লোকসানে বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারিদের একটি আলাদা তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মখলেছুর রহমান বলেন, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে হয়তো কিছু মুরগি খামারি লোকসানের মুখে পড়েছেন। তবে প্রতিটি খামারির পশু-পাখি পালনের আগে তাদের প্রশিক্ষন গ্রহণ করা উচিত। আমাদের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে খামারিদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া যুব উন্নয়নের মাধ্যমেও প্রশিক্ষন নিতে পারেন। আমরা উপজেলার প্রতিটি খামার পর্যবেক্ষন করে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাছাড়া আমাদের হাসপাতাল থেকে খামারিদের মাঝে বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করে থাকি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ