ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কার্যত লকডাউন হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হাটবাজারে যাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে লকডাউনের কারণে বন্ধের পর্যায়ে যান চলাচলও।

এ অবস্থায় দেশের অন্য জেলার পাইকাররাও যেতে পারছেন না মিরসরাইয়ে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার সবজিচাষীরা। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ক্ষেত থেকে সবজি তুলা বন্ধ রেখেছেন অনেক কৃষক। তাই ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে অধিকাংশ সবজি।

মিরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় প্রায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর সবজি চাষ করা হয়েছে। এ উপজেলায় বেগুন, টমেটো, মুলা, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সালগম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, বরবটি, শিম, চালকুমড়া, ঝিঙ্গার চাষ হয় প্রচুর। এছাড়া চাষ হয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক। চলতি বছর শিম চাষ হয়েছে ৬০০ হেক্টর, বেগুন ১২০, ফুলকপি ৬০, পাতাকপি ৫৫, টমেটো ১৫০, করলা ৫০ ও বরবটি ৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার বড় দারোগারহাট, বারইয়ারহাট, হাদিফকির হাট, বড়তাকিয়া, বড় কমলদহ, ভাঙ্গাপোল রাস্তার মাথা, মিঠাছড়া, আবুতোরাবসহ বিভিন্ন বাজারে বসে সবজির পাইকারি হাট। পাইকাররা এসব সবজি কৃষকের কাছ থেকে কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার দূরপাল্লার সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে পাইকাররা আসতে না পারায় কৃষকরা সবজির উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না। আবার স্থানীয় বাজারেও সবজির চাহিদা কমে গেছে আশঙ্কাজনকহারে। এ পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না। ফলে ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি।

উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় গ্রামের সবজিচাষী নূর হোসেন জানান, তিনি চলতি বছর ১ লাখ টাকা খরচ করে ৯০ শতক জমিতে বরবটি চাষ করেছেন। প্রত্যেক বছর এ সময়ে প্রতি কেজি বরবটি ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু করোনা আতঙ্কে পাইকাররা আসতে না পারায় বর্তমানে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। এছাড়া সোনাপাহাড়ে ক্ষেত থেকে দৈনিক বিভিন্ন ধরনের দুই হাজার কেজি সবজি তোলেন চাষীরা। কিন্তু এখন তুলছে মাত্র ৫০০-৭০০ কেজি। ফলে অনেক সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক চাষী উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না বলে দাবি করেন।

উপজেলার মস্তাননগর থেকে সোনাপাহাড়ে সবজি কিনতে আসা পাইকার নিজাম উদ্দিন জানান, তিনি আগে সোনাপাহাড়ের চাষীদের কাছ থেকে দৈনিক ৮০-১০০ কেজি সবজি কিনে চট্টগ্রাম শহরে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় দৈনিক ১৫-২০ কেজি সবজি কিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। তার মতো অধিকাংশ পাইকারই এখন অনেক কম সবজি কিনছেন।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানায়, করোনা সংক্রমণের কারণে যান চলাচল বন্ধ। এজন্য দূরের পাইকাররা এখানে আসছেন না। তাছাড়া স্থানীয় হাটবাজারেও ক্রেতা কম। এজন্য সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। তবে ক্ষেত থেকে সবজি না তুললে লোকসানের পরিমাণও আরো বাড়বে। তাই সবজি ক্ষেতে নষ্ট না করে কম দামেই বিক্রির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সূত্র: বণিক বার্তা