কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আম পাকলে ভেতরে পোকা দেখা যায়। পোকা ভেতরে আঁকাবাঁকা গর্ত করে ওখানে থাকে, গর্তে ময়লা দেখা যায়। প্রতিরোধ হিসেবে কী করণীয় বা আগে থেকেই যেসব করতে পারেন।

এ সমস্যাটি আমে ভোমরা পোকা আক্রমণ করলে হয়ে থাকে। এ পোকা প্রতিরোধে ফলের মার্বেল অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক মিশিয়ে গাছের কাণ্ড, ডাল ও পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

এছাড়া মুকুল আসার আগে পৌষ-মাঘ মাসে সম্পূর্ণ বাগান বা প্রতিটি আম গাছের চারদিকে ৪ মিটারের মধ্যে সব আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে মাটি কুপিয়ে উল্টে দিলে মাটিতে থাকা ভোমরা পোকাগুলো ধ্বংস হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সেটি হলো আম সংগ্রহের পর সব পরগাছা ও পরজীবী উদ্ভিদ ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তাহলেই এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পড়তে পারেন: বাজারে উঠছে রাজশাহীর আম, দামে খুশি চাষিরা

আম-লিচুর ফল ফেটে যাচ্ছে! করণীয় জানুন

ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের দেশে আম-লিচু চাষের বড় অন্তরায় ফল ফেটে যাওয়া (Fruit cracking) রোগটি। এতে আম-লিচু চাষিরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আম-লিচুর ফল ফেটে যাচ্ছে! করণীয় জানতে চেয়েছেন অনেকেই। আসুন জেনে নিই:-

বিভিন্ন কারণে লিচুর ফল ফেটে যাওয়া রোগটি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চাষকৃত লিচুর জাতগুলোর মধ্যে বোম্বাই লিচুতে ফল ফেটে যাওয়া রোগের আক্রমণ বেশি দেখা যায়।

লিচুর ফল ফেটে যাওয়া রোগের বিস্তার:

সাধারণত আগাম জাতের লিচুতে ফল ফেটে যাওয়া সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। সেসব কারণে মধ্যে রয়েছে।

১. দীর্ঘ খরার পর হঠাৎ বৃষ্টি, শুষ্ক ও গরম আবহাওয়ার ফলে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

২. বেলে দোঁআশ বা পলি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক কম বিধায় এই ধরণের মাটিতে লিচু বাগান হলে ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৩. এছাড়াও লিচু বাগানের মাটিতে বোরণ ও ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে এই রোগের দ্রুত বিস্তার হয়ে থাকে।

পড়তে পারেনআমের মুকুল ও কুড়ি ঝরা রোধে করণীয়

লিচুর ফল ফেটে যাওয়া রোগের লক্ষণ:

১. অনেক দিন ধরে খরা চলতে থাকলে ফলের বাহিরের খোসা শক্ত হয়ে যায়।
২. পরবর্তীতে হঠাৎ করে বৃষ্টি হলে ফলের বৃদ্ধি শুরু হয় অর্থাৎ লিচুর পাল্প দ্রুত বাড়তে থাকে।
৩. বাহিরের খোসা শক্ত থাকায় ফলের ভিতরের অংশের সাথে তা সুষমভাবে দ্রুত বাড়তে না পারার কারণে লিচুর খোসা ফেটে যায়।
৪. ফল ফেটে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি খুব তাড়াতাড়ি হয়ে থাকে এবং ফেটে যাওয়া জায়গাতে দ্রুত রোগ-জীবানুর আক্রমণ হতে পারে।

লিচুর ফল ফেটে যাওয়া রোগের প্রতিকারঃ

১. লিচু গাছে বছরে ৩ কিস্তিতে অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে, বর্ষার শেষে এবং শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর গাছের বয়স অনুসারে পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় দিতে হবে।
২. খরা মৌসুমে ফল ধারার পর থেকেই ১০-১৫ দিন পর পর লচু গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

৩. সেচ প্রদানের পর প্রয়োজনে গাছের গোড়ায় কচুরিপানা বা খড় দ্বারা আচ্ছাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. প্রতি বছর প্রতি গাছের গোড়ায় ক্যালসিয়াম সার (ডলোচুন – ৫০ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।
৫. ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট ১০ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ২১ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে।
৬. গুটি বাধার পর পরই প্লানোফিক্স বা মিরাকুলান প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৭. বোরিক এসিড বা সলুবোর বোরণ ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

আম ফেটে যাওয়া রোগের সমাধান:

আম ফেটে যাওয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারণটি হলো শারীরবৃত্তীয় কারণ। বিশেষ করে আম গাছে পানি সেচ প্রয়োগে সমস্যা হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়া গরম ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণেও এটি হতে পারে। এ কারণে সময়মতো সেচ ও পরিচর্যার মাধ্যমে এ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।

বিশেষ করে রাতের বেলা তাপমাত্রা কম এবং দিনের বেলায় প্রচন্ড তাপদাহ এরকম পরিস্থিতিতে আম-লিচুর গুটি ঝরা বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য বাগানের মাটিতে সবসময় জো অবস্থায় রাখতে হবে।

লিচুর ফল ফেটে যাওয়া রোগের কয়েকটি সহজ সমাধান শিরোনামে সংবাদের তথ্য কৃষি বাতায়ন থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ