আবু হাসাদ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর আমের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে দেশ থেকে বিদেশেও। এ অঞ্চলে বিখ্যাত ফজলি, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, লক্ষণভোগ ল্যাংড়া, আম্রপালি ও আশ্বিনাসহ নানা প্রজাতির আম বাগান রয়েছে। তবে, বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কাটিমন আম।

আমচাষ অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশী লাভজনক হওয়ায় অনেকই এখন উন্নত জাতের আম বাগান তৈরিতে আগ্রহ করছেন। তবে গত বছর থেকে চাষিরা নতুন জাতের বারোমাসি আম কাটিমন চাষে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন। এর কারণ হিসাবে চাষিরা বলছেন, মৌসুমে সকল আম বাজারে আসে। তবে কাটিমন জাতের আম মৌসুম ছাড়াও বাকি সময়ে পর্যাপ্ত পরিমান আম ধরে। এতে লাভের পরিমান কয়েকগুন বেশী পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সাকলাইন বলেন, গত বছর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় ১২ একর জমিতে বানিজিক ভাবে কাটিমন জাতের এই বারোমাসি আম চাষ করা হয়েছে। আর ওই বাগান গুলোতে নিয়মিত পরিচর্যা করায় আশানুরুপ আম ধরছে। বর্তমানে আম গুলো মৌসুমের চেয়ে কয়েকগুন বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে এ বছর স্থানীয় চাষিদের আগ্রহ অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে। চাষিরা এবার বাণিজিক ভাবে বাগান করতে প্রাথমিক ভাবে প্রায় দুইশত একর জমি নির্বাচন করেছেন।

জিউপাড়া ইউনিয়নের কানাইপাড়া গ্রামের আমচাষি শাখাওয়াত হোসেন মুন্সি বলেন, প্রায় প্রতিবছরই নতুন জাতের আমের জাত বাজারে আসছে। তবে এই অ লের চাষিরা আমের গুনগত মান যাচাই করেই বাগান তৈরি করেন। সে হিসাবে কাটিমন আম খুবই সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। আর সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করতে পারলে মৌসুম ছাড়াও বছরে আরো দুইবার আম ধরছে। যার কারনে গত বছর থেকেই অনেক চাষিরা বারোমাসি এই কাটিমন জাতের আম বাগান করতে বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, এবার ব্যাক্তিগত ও বিভিন্ন নার্সারিতে কাটিমন জাতের আমের চারা পর্যাপ্ত উৎপাদন করা হচ্ছে।

জিউপাড়া গ্রামে কাটিমন আম চাষি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গত বছর প্রায় দুই একর জমিতে কাটিমন জাতের আমের চারা রোপন করা হয়েছে। এ বছর (মৌসুম ছাড়া) বেশীরভাগ গাছে দুই চারটি করে আম এসেছে। এখন প্রায় সকল গাছে আবারো মুকুল এসেছে। বর্তমানে কাটিমন আম প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারে কাটিমন জাতের আমের চাহিদা অনেক। সেই সাথে এই আমের বাগান করতেও অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে আমার ব্যাক্তিগত নার্সারিতে কয়েক হাজার কাটিমন জাতের চারা তৈরি করা হচ্ছে। চারা গুলো এবার নিজেস্ব জমিতে রোপন করা হবে। আর বাকি চারা গুলো পরিচিত কয়েকজন কিনতে চেয়েছেন।

চারা উৎপাদনকারী খালেদ হোসেন বলেন, আমার নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ লাখ আমের চারা রয়েছে। এরমধ্যে কাটিমন জাতের চারা আছে প্রায় ৫০ হাজার। তবে গত মাসেই কাটিমন জাতের সকল আমের চারা বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রতিটি কাটিমন আমের চারা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূঁইয়া বলেন, আম চাষ এ অ লের একটি লাভজনক ও বানিজিক ফসল। এরমধ্যে বারোমাসি কাটিমন জাতের নতুন এই আম স্থানীয় চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এই আম সিজন ও আনসিজনে সমপরিমান ধরে। এর স্বাদ ও গুনগত মানও খুবই ভালো। গত বছর থেকে অনেক চাষিরা কাটিমন জাতের আম বাগান করছেন। আশা করা যায় আগামি দুই তিন বছরের মধ্যে কাটিমন আমের চাষ ব্যাপক বিস্তর ঘটবে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ