নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পুষ্টি নিরাপত্তায় অন্যতম বিকল্প বায়োফরটিফাইড শস্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, স্বল্পসুদে ঋৃণের সুবিধা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন করা সম্ভব। পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড শস্য হতে পারে অন্যতম বিকল্প। রোববার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সম্মেলন কক্ষে হারভেস্টপ্লাস আয়োজিত ‘ইমপ্রুভিইং নিউট্রিশন থ্রু বায়োফরটিফাইড ক্রপ শীর্ষক সেমিনারে এ মত প্রকাশ করেন বক্তারা।

পুষ্টির চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে বক্তারা বলেন, পাঁচ বছরের নিচে এমন বয়সী ৪১ শতাংশ শিশু এখনও জিংক স্বল্পতায় ভুগছে। আবার বিভিন্ন বয়সি ৭৩ শতাংশ নারীর রয়েছে জিংক স্বল্পতা। পাঁচ বছর বয়সী তিনজন শিশুর মধ্যে একজন খর্বাকৃতির।

বক্তারা জানান, সার্বিকভাবে উচ্চমাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে এখন বাংলাদেশ। পুষ্টি নিরাপত্তাকে স্বাস্থ্যগত ইস্যু হিসেবে বিবেচনা না করে কৃষি উৎপাদন আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসির) নির্বাহি চেয়ারম্যান ড. মো: কবির ইকরামুল হকের সভাপত্তিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষনা) ড. মো. আবদুর রউফ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুকের কর্মশালায় উন্মুক্ত বক্তব্য রাখেন কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) নির্বাহি পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর, আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা প্রতিষ্ঠানের (ইরি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোমনাথ ভান্ডারি, সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জয়নুল আবেদিন, বাংলাদেশ ধান গবেষনা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) গবেষনা পরিচালক ড. তমাল লতা আদিত্যসহ গবেষক, সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময়ে হারভেষ্ট প্লাসের গ্লোবাল গবেষনা পরিচালক ওলফ পিফেইফার বলেন, বিশ্বের ৩০ টি দেশে ১৯০ টি বায়োফরটিফাইড শস্যের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, বিনস, কাসাভা, কমলা, সারগম অন্যতম।

তিনি জানান, বাংলাদেশের উচ্চ মাত্রার অপুষ্টি বিদ্যমান থাকায় বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। সারা বিশ্বে এখন ৮৫ লাখ পরিবার বায়োফরটিফাইড ক্রপ উৎপাদন করছে। আর ৪ কোটি মানুষ সরাসরি এ ধরনের শস্য গ্রহনের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।

হারভেস্টপ্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. মো: খায়রুল বাশার বলেন, বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১৬ টি বায়োফরটিফাইড ক্রপ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে জিঙ্গ সমৃদ্ধ ধানের জাত ৮ টি, জিঙ্গ ও আয়রন সমৃদ্ধ মসুরের জাত ৩ টি, জিঙ্গ সমৃদ্ধ গমের জাত একটি এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত ৪ টি। প্রক্রিয়াগত ক্রুটির কারনে মিনিকেট নামের ধানের যে চালটি পাওয়া যাচ্ছে তাতে জিংক কম আছে।

তিনি আরো বলেন, হারভেস্ট প্লাস প্রোগাম বাংলাদেশে জিংকের ঘাটতি পূরণে ব্রি ও ইরির সহায়তায় আবিষ্কার করেছে জিংক ধান। প্রয়োজনীয় শক্তির ৮৪ শতাংশই আসছে ভাত থেকে। মোট জমির ৭০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়। সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

জিংক সমৃদ্ধ ধানে জিঙ্গ এর পরিমান বেশি থাকে। জিংক সহ অন্যান্য অপুষ্টির ঘাটতি পুরণে বিশ্বে ২০০২ সাল হতে কাজ করে যাচ্ছে হারভেস্টপ্লাস প্রোগ্র্রাম। হারভেস্ট প্লাস প্রোগ্রামটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ট্রপিক্যাল এগ্রিকালচার ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রির্সাচ ইনিস্টিটিউট এর যৌথ প্রয়াসে পরিচালিত।

যা ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেটিভ গ্রুপ ফর এগ্রিকালচারাল রির্সাচ অন এগ্রিকালচারাল ফর নিউট্রিশন এন্ড হেলথ এর অংশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এজন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের শস্য উৎপাদন, পরিবেশকে রক্ষা করে কৃষি উৎপাদনে নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি নিরাপত্তায় বারটান গবেষনা প্রতিষ্টানকে কার্যকর করা হয়েছে। যেকোন শস্যের জাত জনপ্রিয় করতে গেলে কৃষকের চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় বায়োফরটিফাইড ক্রপের কোন বিকল্প নেই। তাই এ ফসলকে উৎসাহিত করতে গেলে যেমন গবেষনায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, তেমনি কৃষক পর্যায়ে আবাদের জন্য ৪ শতাংশ সূদে ঋণ দিতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, যেকোন শস্যের জাত জনপ্রিয় করতে গেলে কৃষকের স্বার্থকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।

বায়োফরটিফাইড ক্রপ দেশে বাণিজ্যিকভাবে আবাদের ক্ষেত্রে কতটুকু সফলতা এনে দিবে সে বিষয়ে গবেষনা জরুরি। পুষ্টি নিরাপত্তায় এসব শস্যের জাত প্রয়োজনীয় হলেও কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তায় কতটুকু সহায়ক হবে সেটি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রসারণ করতে হবে। আর জাতটি জনপ্রিয় করতে হলে মিডিয়া, সম্প্রসারণ কর্মী, নীতি নির্ধারণ এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।