এগ্রিকেয়ার২৪ ডেস্ক: বিনা’র মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের রাইজোরিয়াম জীবাণু ব্যবহার করে উদ্ভাবিত জীবাণু সার ব্যবহারে ডাল এবং তৈল জাতীয় ফসলে ইউরিয়ার ব্যবহার সর্ম্পূণরূপে সাশ্রয় হবে।

জীবাণু সার তৈরি হয় জীবাণু বা অণুজীব এবং বাহক পদার্থ সমন্বয়ে। অণুজীব হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ব্যবহৃত হয়ে থাকে জীবাণু সারে। কার্যকারিতা অনুসারে জীবাণু সারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নাইট্রোজেনের বিকল্প জীবাণু সার, ফসফরাসের বিকল্প জীবাণু সার এবং পচনকারক জীবাণু সার।

নাইট্রোজেনের বিকল্প জীবাণু সার: জীবাণু সারে নাইট্রোজেন সংবদ্ধনকারী জীবাণু হিসেব ব্যবহৃত হয়। এ জীবাণু বাতাস থেকে তাদের শরীরে এনজাইমের মাধ্যমে নাইট্রোজেন সংবদ্ধন করে এবং তা ফসলকে দিয়ে থাকে।

এ জীবাণু দু’ প্রকারের- সিম্বায়োটিক এবং নন-সিম্বায়োটিক। সিম্বায়োটিক হল যে সকল জীবাণু বাতাস থেকে তাদের শরীরে নাইট্রোজন সংবদ্ধন করে ও গাছকে সরাসরি যোগান দেয় এবং সাথে সাথে গাছের শরীর থেকে অন্যান্য আবশ্যকীয় উপাদান গ্রহণ করে থাকে, যেমন রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া শিম জাতীয় গাছের শিকড়ে নডিউলের মাধ্যমে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংবদ্ধন করে গাছকে দেয়।

নন-সিম্বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া মুক্তভাবে মাটিতে বসবাস করে এবং বাতাসের নাইট্রোজেন নিজ শরীরে সংবদ্ধন করে মাটিতে সরবরাহ করে। গাছ মাটি থেকে এ নাইট্রোজেন নিয়ে থাকে। অ্যাজোটোব্যাকটার, এ্যাজোস্পিরিলাম, সিউডোমোনাস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া মুক্তভাবে নাইট্রোজেন সংবদ্ধনকারী জীবাণু।

ফসফরাস দ্রবীভূতকারী জীবাণু সার: মাটিতে বসবাসকারী অনেক জীবাণু আছে যারা বিভিন্ন রকমের এনজাইম ও বিভিন্ন প্রকারের বায়োকেমিক্যাল পদার্থ নিঃসরণ করে যা মাটিতে আবদ্ধ ফসফরাস জাতীয় যৌগকে উদ্ভিদের গ্রহণযোগ্য আকারে পরিণত করে। ফলে উদ্ভিদ তা গ্রহণ করতে পারে। এ সকল জীবাণুকেই বংশবৃদ্ধি করে এ প্রকারের সার তৈরি করা হয়। এ প্রকারের জীবাণু হল- সিউডোমোনাস, অ্যাজোটোব্যাকটার, পেনিসিলিয়াম, এসপারজিলাস ইত্যাদি।

পচনকারক জীবাণু সার: খড়, গোবর, শস্যের অবশিষ্টাংশ, বাড়ির আবর্জনা, শহরের আবর্জনা, কচুরীপানা, আগাছা ইত্যাদি পচানোর জন্য এক ধরনের জীবাণু সার ব্যবহার করা হয়। এ সারই আবর্জনা পচনকারক জীবাণু সার হিসেবে পরিচিত।

এ পচনকারক জীবাণু সার খড়কুটা ও বিভিন্ন প্রকার আবর্জনা ইত্যাদি সাথে মিশিয়ে স্তুপ আকারে রেখে দিলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে জীবাণু আবর্জনাকে পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে অথচ জীবাণু ব্যতীত পচতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ মাস।

জীবাণু সারের উপকারিতা: ১) জীবাণু সার বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংবদ্ধন করে আবর্জনা পচনের কাজ সমাধা করে ফলে ফসল উক্ত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে ফলন বৃদ্ধি করে। শিম জাতীয় ফসল যথা- মসুর, ছোলা, মুগ, মাষ, সয়াবিন ইত্যাদি ফসলে জীবাণু সার প্রয়োগ করলে ফলন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।

২) জীবাণু সারে ব্যবহৃত অনুজীবসমূহ বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ বৃদ্ধিকারী হরমোন নিঃস্মরণ করে যাতে গাছের শিকড় বৃদ্ধি পায় এবং বেশি পরিমাণ খাদ্য আহরণ করে ও পানি পরিশোষণ করে। এতে গাছের উচ্চতা, ডালপালা বৃদ্ধি, ফসলের বৃদ্ধি ঘটায়।

৩) বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ায়। ৪) ফসলের ক্ষতিকর জীবাণু বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ফলে তাদের সংখ্যা হ্রাস পায় ও রোগবালাই কম হয়ে থাকে ও ফলন বৃদ্ধি পায়। ৫) রাসায়নিক সার যথা ইউরিয়া, টিএসপি ইত্যাদির চেয়ে দামে সস্তা। ৬) জীবাণু সার পরিবেশ দূষণ ও মানুষের শরীরের কোন ক্ষতি করে না। ৭) মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

 

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০১৮