ড. মো: দেলোয়ার হোসেন প্রধান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফসলের রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে ফসলকে রক্ষা করার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করেন। সেইসাথে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদনকে ধরে রাখার জন্য কৃষকরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বালাইনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। তবে, ফল-মূল, শাকসবজি থেকে রাসায়নিক দূর করার ৪টি কৌশল গবেষণায় পাওয়া গেছে।

বাজারের ফল-মূল, শাকসবজিতে কী পরিমাণ বালাইনাশক পাওয়া গেছে?

কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি ব্যবহার করার কারণে আমাদের দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। ফসলের রাসায়নিক, বালাইনাশক ব্যবহার এরপর বালাইনাশকের অপেক্ষমান সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তার আগেই ফসল সংগ্রহ করলে ফসলের বিষাক্ত রাসায়নিক, বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে। বাংলাদেশের কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বালাইনাশক বিশ্লেষণ গবেষণাগারের প্রাপ্ত ফলাফল হতে দেখা যায়, বাজার হতে সংগৃহীত বিভিন্ন প্রকার সবজির নমুনা সময়ের মধ্যে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মতো বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ বিদ্যমান।

পড়তে পারেন: দেখেই চিনুন মিষ্টি লিচু

এদের মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ নমুনা থেকে প্রাপ্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার উপরে ছিল। তবে বাজারজাতকরণকৃত বিভিন্ন প্রকার ফলের যেমন, আম, লিচু, কলা ইত্যাদি নমুনা প্রাপ্তবয়স্কের অংশের পরিমাণ শাকসবজিতে প্রাপ্তবয়স্কের পরিমাণের চেয়ে অনেক কম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন হতে জানা যায়, বিশ্লেষণকৃত বিভিন্ন প্রকার ফল এর নমুনা সমূহের মধ্যে শতকরা আট থেকে দশ ভাগ বালাইনাশক পাওয়া গেছে।

ফলমূল ও শাকসবজি হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণ পদ্ধতি

ফলমূল শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব নয় তবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে ফলমূল-শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য হতে সহজে বানানো শতাংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আরে দূর করা যায়।

যে সমস্ত পদ্ধতির মাধ্যমে ফলমূল ও শাকসবজি হতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায় সেগুলো হলো:-

১. ফলমূল ও শাকসবজি ধৌতকরণ

২.সবজির খোসা ছড়ানো

৩.শাকসবজি রান্না করা

৪.ফলমূল ও শাকসবজি বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা

পড়তে পারেন: যেভাবে চিনবেন পাকা ও মিষ্টি কাঁঠাল

১. ফলমূল ও শাকসবজি ধৌতকরণ

লমূল শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য চলমান অথবা স্থায়ী পানি দ্বারা ধৌত করার মাধ্যমে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায়। ধৌত করার পদ্ধতির কার্যকারিতা নির্ভর করে ব্যবহৃত বালাইনাশকের ফিজিও কেমিক্যাল বৈশিষ্ট্যের উপর। যেমন পানিতে বালাইনাশকের দ্রবণীয়তা ফল ও সবজি ইত্যাদিতে বালাইনাশকের প্রকৃত অবস্থান। ধৌত করনের জন্য ব্যবহৃত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূরীকরণে প্রভাব ফেলে। গরম পানির চেয়ে ঠান্ডা পানিতে ধুলে বেশি বালাইনাশক দূরীভূত হয়। ধৌত করার সময় যদি এক মিনিট হাত দ্বারা ভালোভাবে ফলমূল-শাকসবজি পরিষ্কার করা হয় তবে পদ্ধতির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

২.সবজির খোসা ছড়ানো

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবুজের পায়ের পাতা এবং ফলমূল ইত্যাদি এর বাইরের আবরণের তুলনামূলকভাবে বেশি বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ উপস্থিত থাকে। কাজেই ফলমূল-সবজি বাইরের আবরণের দূর করা হয় তবে দূর করা যায়। এ পদ্ধতিটি বেশি কার্যকর যে সমস্ত ফল ও সবজির খোসা ছাড়া ভক্ষণ করা হয় যেমন শশা কলা পেঁপে আম লেবু জাতীয় ফল ইত্যাদি।

পড়তে পারেন: আম-লিচুর ফল ফেটে যাচ্ছে! করণীয় জানুন

৩.শাকসবজি রান্না করা

শাক সবজি রান্না করার মাধ্যমে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করা যায় এ পদ্ধতির কার্যকারিতা নির্ভর করে রান্না সময়কাল তাপমাত্রা পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য পানি সংযোজনের পরিমাণ এবং রান্নাঘর খোলা বন্ধ রেখে ইত্যাদি।

৪.ফলমূল ও শাকসবজি বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা

ক) লবণ পানির মিশ্রণে ডুবিয়ে রাখলে বালাইনাশক দূর হয়। সোডিয়াম ক্লোরাইড যা আমরা বাড়িতে খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহার করি। এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ২ চা চামচ খাবার লবণ মিশিয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত ফলমূল-শাকসবজি ডুবিয়ে রাখলে বালাইনাশক দূর হয়। বালাইনাশকের ক্রিয়ার  ধরনের উপর ভিত্তি করে শতকরা ৩০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর হয়।

পড়তে পারেন: পুদিনা পাতার আশ্চর্য ১০ স্বাস্থ্যগুণ

খ) ভিনেগার পানিতে ডুবিয়ে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। ৫ পার্সেন্ট ভিনেগার দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এজন্য ১ লিটার পানিতে ৫০ মিলিমিটার সাদা ভিনেগার মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর দ্রবনে ডুবিয়ে রাখলে ৪০ থেকে ৮০ ভাগ বালাইনাশক দূর হয়।

ফল-মূল, শাকসবজি থেকে রাসায়নিক দূর করার ৪ কৌশল লিখেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ব বিভাগের প্রধান ড. মো: দেলোয়ার হোসেন প্রধান। 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ