প্রবল কুমার মন্ডল, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফরমালিন হচ্ছে ফরমালডিহাইডের ৩৭ শতাংশের জলীয় দ্রবণ। আমাদের দেশে ফরমালিন আতঙ্ক অনেক বেশি, অনেকে ফরমালিনের ভয়ে ফল খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) বলেছে, ফরমালিন শাকসবজি, ফল সংরক্ষণে ফরমালিনের কোনো ভূমিকা নেই, তবু মানুষের ভ্রান্তধারণা এখনো দূর হয়নি।

শাকসবজি, ফলমূলে ফরমালিন কাজ করে না। কারণ, এইগুলো উচ্চ ফাইবার যুক্ত এবং নিম্ন প্রোটিনযুক্ত। কৃত্রিমভাবে যোগ করা ফরমালিন প্রোটিনের সঙ্গে ছাড়া বিক্রিয়া করতে পারে না।

তবে মাশরুম উচ্চ প্রোটিনযুক্ত হওয়ায় তাতে ফরমালিন কাজ করে। মাছ, মাংস, দুধে প্রোটিন থাকায় তাতে ফরমালিন কাজ করে। তাই দুধ, মাংস, মাছ কিনতে হলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং পানি দিয়ে ঠিকমত ধুয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।

তবে শাকসবজি ও ফলমূলে যে ফরমালিন পাওয়া যায় না, তা কিন্তু নয়। কিছু ফলে ফরমালিন পাওয়া যায়। কারণ, তা প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়।

যদি ফলমূলে প্রাকৃতিকভাবে ফরমালিন পাওয়া যায়, তবে তা ক্ষতিকর না। ফলমূল শাকসবজিকে যদি তাপ দেওয়া হয় এবং পানি দিয়ে ঠিকমত ধোয়া হয়, তবে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উভয় প্রকারের ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায়, বা পরিমাণ কমে আসে, যা দেহের জন্যে ক্ষতিকর হবে না।

যেসব খাবারে ট্রাই মিথাইল এমিন অক্সাইড থাকে, সেসব খাবারে ফরমালডিহাইড তৈরি হয়।

ট্রাই মিথাইল এমিন অক্সাইড যুক্ত খাবার যখন ফ্রিজে রাখা হয়, তখন তা থেকে ফরমালডিহাইড ও ডাইমিথাইল এমিন সমানভাবে উৎপন্ন হয়।

প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ফরমালডিহাইডের মাত্রা ৩-৬০ মিগ্রা/কেজি, যা মানব দেহের জন্যে ক্ষতিকর নয় ।(BFSA)। হংকং ফুড সেইফি অথরিটির মতে, অনেক খাবারের ক্ষেত্রে তা সর্ব্বোচ্চ ৪০০ মিগ্রা/কেজি হতে পারে।

মাশরুম, গরুর মাংস, পোল্ট্রিতে প্রাকৃতিকভাবে ফরমালিন তৈরি হয় এবং এগুলোতে কৃত্রিম ফরমালিনও কাজ করে।

ফল, সবজি, আপেল, কলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কুমড়া, তরমুজ, টমেটো এইগুলোতে কৃত্রিম ফরমালিন কাজই করে না।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শাকসবজি, ফলমূলে ফরমালিন যোগ করলে তার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ফরমালিন যোগ করতে চাইলে অনেকক্ষণ ফরমালিনযুক্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। যেহেতু শাকসবজি ফলমূলে ফরমালিন কাজ করে না, তাই এটা কতটুকু যৌক্তিক তা আমার জানা নেই।

পরীক্ষাগারে কীভাবে বোঝা যাবে এই ফরমালিন প্রাকৃতিক নাকি মানুষের দেওয়া?

যদি খাবারে ডাইমিথাইল এমিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়, তবে বোঝা যাবে এই খাবারে প্রাকৃতিকভাবে ফরমালিনের উপস্থিতি আছে। আর যদি না থাকে তবে তা মানুষের দেওয়া।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন অনুযায়ী, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে খাবারে ফরমালিনযুক্ত করে, তবে তার পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।

একটা মানুষের প্রতিদিন ১০০ গ্রাম শাক, ২০০ গ্রাম অন্যান্য সবজি এবং ১০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত।

ভিটামিন মিনারেলসের অভাব দূর করতে শাকসবজি, ফলমূলের বিকল্প নেই। তাই বিভ্রান্ত হয়ে এসব থেকে দূরে থাকা ঠিক নয়।

ফল, শাকসবজি ও ফরমালিন ভীতি লেখাটির লেখক: পুষ্টিবিদ, এসএআরপিভি পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।