ফসল উৎপাদনে মোট উপকরণের

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফসল উৎপাদনে মোট উপকরণের ৪৩ শতাংশই সেচে খরচ। সেচের পানির দক্ষ ব্যবহার না হওয়ায় পানির অপচয় হচ্ছে। এতে সেচ বাবদ খরচও বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্র জানায়, ফসল উৎপাদনে উপকরণ বাবদ যে ব্যয় হচ্ছে কৃষকের, তার ৪৩ শতাংশই চলে যাচ্ছে সেচে।

উপকরণ বাবদ কৃষক প্রতি খরচ হচ্ছে বছরে গড়ে ১৪ হাজার ৯০১ টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৭৩ টাকাই ব্যয় হচ্ছে সেচ বাবদ।

বিবিএস এর সূত্র বলছে, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ময়মনসিংহে। এর পরই রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগ রয়েছে। ফসল আবাদে সেচ ছাড়াও কৃষক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন বীজ, প্লান্ট, জৈব ও রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ও বালাইনাশক।

বিবিএসের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ বিভাগে কৃষকপ্রতি সেচে খরচ হচ্ছে ৭ হাজার ৭০৫ টাকা।

রাজশাহীতে এ খরচ ৭ হাজার ৫৫৪ ও ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ৩৬৯ টাকা। এছাড়া খুলনায় সেচ বাবদ কৃষকপ্রতি বছরে খরচ হচ্ছে গড়ে ৭ হাজার ২৬৯, রংপুরে ৬ হাজার ২৭৪, সিলেটে ৫ হাজার ৫২৭, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৫৫৯ ও বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ৬৭৩ টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের (আইডব্লিউএমআই) তথ্যমতে, ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সেচের পানি ব্যবহারে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। এখনো সেচের পানির ৬২ শতাংশই অপচয় হচ্ছে। অনেক দেশে সেচের পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে দ্রুত উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশে তা হচ্ছে ধীরগতিতে।

বিতরণ ও প্রয়োগ পদ্ধতির দুর্বলতার কারণেই সেচের পানির অদক্ষ ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি, পানি ও পরিবেশ প্রকৌশলী ড. মো. ইফতেখারুল আলম।

এ কর্মকর্তা জানান, পানির অদক্ষ ব্যবহারের কারণে উৎপাদন খরচ কমানো যাচ্ছে না। সেচের পানির অপচয় বন্ধে কার্যকর প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে।

ফসল উৎপাদনে মোট উপকরণের ৪৩ শতাংশই সেচে খরচ কমাতে পাশাপাশি এটি জনপ্রিয় করতে কৃষককে প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কতদিন পর কতটুকু পানি দিলে সর্বোচ্চ ফলন সম্ভব, কৃষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে সে বিষয়েও।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে ধান আবাদ হয় প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক কোটি হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪৭-৪৮ লাখ হেক্টরে হয় বোরো আবাদ। এ বোরো আবাদেই সেচের প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি।

এর বাইরে গম ও ভুট্টা আবাদেও সেচের দরকার পড়ে। এসব সেচে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৩৭ হাজার ১৭৫টি গভীর ও ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬০টি অগভীর নলকূপ এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৮টি লো লিফট পাম্প। এসব নলকূপের মধ্যে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৪টি চলে বিদ্যুতে।

আরও পড়ুন: আজ থেকে শুরু কৃষি শুমারি

বাকি ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৯৫৯টি চলে ডিজেলে। এছাড়া কিছু হস্তচালিত ও সনাতন পদ্ধতির যন্ত্রপাতি দ্বারা সেচকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের প্রায় ৫৫ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছে।

তবে বিতরণ ও প্রয়োগ পদ্ধতিতে দুর্বলতার কারণে সেচের পানির অদক্ষ ব্যবহার হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন বন্ধ করতে হবে। কতদিন পর কতটুকু পানি দিলে সর্বোচ্চ ফলন সম্ভব, সে বিষয়ে কৃষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

জমিতে কখন কী মাত্রায় সেচ দিতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার কার্যকর প্রযুক্তি এডব্লিউডি পাইপ (এলাকাভেদে হাতিম ও জাদু পাইপ নামে পরিচিত)।

সেচের পানির দক্ষ ব্যবহার করা গেলে অপচয় কমানো সম্ভব হতো। এতে কৃষকের খরচ কমানোর পাশাপাশি সেচ নালার মাধ্যমে জমির অপচয় রোধ, পানির অদক্ষ ব্যবহারে পানির স্তর নেমে যাওয়া প্রতিরোধ এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানিরও অপব্যবহার কমানো সম্ভব হতো।

আর উপকরণ ব্যয় সার্বিকভাবে কমানো গেলে কৃষকের পণ্যের দাম কমলেও খুব বেশি ক্ষতির শিকার হতে হবে না।

ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান।

তিনি জানান, পানির অপচয় কমানোর জন্য সারফেস ও সাব-সারফেস সেচ নালা (ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন) নির্মাণ, পুরনো ডিপ টিউবওয়েলগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে খাল-নালা খনন ও পুনঃখনন করা হচ্ছে। সঠিক পরিমাণ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অবনমন রোধ করতে সেচ দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে।

আমাদের লক্ষ্য রয়েছে সেচ দক্ষতা ৪৮ শতাংশে উন্নীত করার। সেচের জন্য ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও পানি নিষ্কাশন, বিভিন্ন ধরনের হাইড্রলিক স্ট্রাকচার নির্মাণের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ও ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। সূত্র: বণিক বার্তা।