বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে চৈত্রের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। এতে বড় ধরণের ক্ষতিতে পরার শঙ্কা দেখা গেছে কৃষকদের মাঝে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিন ধরে দেখা মেলে নি সূর্যের। হয় তো অজানা কোন অভিমান, অপমান কিংবা অপরাধে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। সূর্যের অনুপস্থিতিতে মেঘেদের রাজত্ব দিন পেরিয়ে রাতের আকাশে।

মেঘেদের একছত্র অধিপত্যে এবারে রমজানের চাঁদ দেখার সৌভাগ্য হয়নি এখানকার কারোরই। চিরাচরিত চৈত্রের খরতাপের বিপরীতে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। রাতে বইছে শ্রাবণের ধারা। আর তাতেই তলিয়ে গেছে মাঠের বোরোধান ক্ষেত। পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে করলা, মিস্টি কুমড়াসহ অন্যান্য সবজি ক্ষেতের ফসল।

সোমবার (৪ এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বৃষ্টিতে বোরোধান গাছের গলায় গলায় পানি। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে করলা, মিস্টি কুমড়া, বেগুন, মরিচের ক্ষেত। তলিয়ে গেছে নিচু অঞ্চলের বোরোধান ক্ষেত। বোরো চাষীরা ক্ষেতের ফসল রক্ষায় পানি নিস্কাশনের জন্য জমির আইল কেটে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার কালভাটের মুখ, নালা পরিস্কার করে পানি নিস্কাশনের চেষ্টা করছেন। দিনের পর দিন কৃষাণ-কৃষাণীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা ধানক্ষেত চৈত্রের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়াতে কাঙ্খিত ফলন নিয়ে এখন শঙ্কিত অনেক কৃষক।

আরও পড়ুন: ধানের হলদে বামন রোগ দমনে কৌশল

উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বোরোচাষী বাবুল হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক ও একরামুল হক বলেন, আমরা চৈত্র মাসে এরকম ভারী বৃষ্টি আমাদের জন্মে দেখিনি। বৃষ্টিতে আমাদের ক্ষেতের ফসল তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার জন্য জমির আইল কেটে দিয়েছি। প্রতি রাতেই যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে জানিনা আমাদের ভাগ্যে কি আছে।

আরও পড়ুন: দেশের সর্বোচ্চ লবণসহিষ্ণু বিনা-১০ ধান চাষে কৃষকের সাফল্য

চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিন, বাদল সরকার ও নজরুল ইসলাম বকসী বলেন, অন্যের কাছে ধার দেনা করে বোরো চাষাবাদ করেছি। অসময়ের বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান তলিয়ে গেছে। আমাদের এলাকার ফসলি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা গ্রামে নির্মিত কালভাটের মুখ ভরাট করায় আমাদের ক্ষেতের পানি নামতে পারছে না। পানি নামার রাস্তা বন্ধ করায় আমরা আবাদ নিয়ে চিন্তায় আছি। আমাদের ফসল রক্ষায় দ্রুত কালভাটের মুখ খুলে দেয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১০ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে বৃষ্টিতে ২০ হেক্টর জমির ধানক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের ফসল নস্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না। পানি নেমে গেলে কৃষকরা আশানুরূপ ফলন পাবেন ইনশাআল্লাহ।