মালিকুজ্জামান, যশোর প্রতিনিধি : যশোরের গদখালীতে এক হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। একই সময় গত বছর এক হাজার ফুল বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। ফুলের দামে এমন পতন হওয়ায় কাঁদছেন কৃষকরা।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের হাড়িয়া এলাকার ফুলচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর উৎপাদন হয়েছে বেশি, বাজারে চাহিদা কম। সে কারণে গাঁদা ফুলের দাম গতবারের অর্ধেক। বাজারে এসে তাই মন খারাপ হয়েছে।

একই কথা বললেন হাড়িয়া উত্তরপাড়ার ফুল চাষি এনাম হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে ফুল বিক্রি করতে গিয়ে কান্না আসছিল। পানিসারার ফুলচাষি শুকুর আলী বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের শেষ বাজার। অথচ, বাসন্তী গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা প্রতি হাজার, হলুদ গাঁদা সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিনে আবহাওয়া ভাল থাকলে বেচাকেনা বাড়তে পারে এই আশা সকল চাষীর।

তাদের মতে, ভোক্তাদের তুলনায় দোকানিরা এখন বেশি ফুল পাচ্ছেন। সে কারণে কম দামে তারা কিনতে চাইছেন। বিকিকিনি বেশি না হলে চাহিদা তেমন থাকে না। আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকরা এবার ভালো ও বেশি ফুল পেয়েছেন। কিন্তু দাম বেশ কম। শ্রমিকদের মজুরি, সার-কীটনাশক, সেচের খরচ মিটিয়ে এমন দামে খুব বেশি একটা লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

মাঝ ডিসেম্বর বিভিন্ন হাটে ফুলের দাম ছিল গাঁদা (বাসন্তী-হলুদরঙা) যথাক্রমে ৪০০ ও ৫০০ টাকা হাজার, ১০০ পিস গোলাপ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস রংভেদে ৪ থেকে ১১ টাকা, ১০০ পিস চন্দ্রমল্লিকা (সাদা) ৭০ টাকা, ১০০ পিস হলুদ ১২০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকা, ১০০ পিস রজনীগন্ধা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, জিপসি প্রতি বান্ডিল ২০ টাকা, রড স্টিক প্রতি বান্ডিল ১০ টাকা। কৃষি বিভাগ বলছে, গাঁদা ফুলে দাম একটু কম পেলেও কৃষকরা অন্যান্য ফুলের দাম ঠিকই পাচ্ছেন। অন্যান্য অনুষ্ঠানেও এবার উৎপাদিত ফুলের চাহিদা থাকবে। কৃষকরা এবার আগের চেয়ে বেশি ফুল বিক্রি করতে পারবেন।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের চাষিরা সারা বছর ফুল চাষ করেন। তারা জমিতে ধান-পাটের চাষ চুকিয়েছেন বহু আগে। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারা দেশের বিভিন্ন আয়োজনের অনুষঙ্গ হয়।

বিশেষ করে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ, বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এসব ফুলের বিকল্প নেই। আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। তাই বছরের এ কয়টি দিবসকে ঘিরেই হয় মূল বেচাকেনা।

পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, ‘এবার ৫ বিঘা জমিতে চায়না গোলাপ, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা ও গাঁদা চাষ করেছি। গত দুই বছর ফুলের বাজার একটু খারাপ গেছে। এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উপলক্ষে বেচাবিক্রি মোটামুটি ভালো। তবে আসছে মৌসুমে ফুল বিক্রিতে বেশ লাভ হবে বলে মনে করছি।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারা বছরের মধ্যে কয়েকটি বিশেষ দিন সামনে রেখে এখানকার ফুলচাষিরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করে থাকেন। একেক অনুষ্ঠানে একেক ধরনের ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ব্যাপক হারে গাঁদা ফুলের চাষ করেন, উৎপাদনও হয়েছে খুব বেশি। আর উৎপাদন বেশি ও চাহিদা কম হওয়ায় দাম গতবারের তুলনায় বেশ কম। তবে এটি খারাপ কিছু না। দাম কম হওয়ায় ভোক্তারা অবশ্য অল্প দামে ভাল ফুলটা পাচ্ছেন।

গত বছর ১৬ ডিসেম্বর সামনে রেখে গাঁদা ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত হাজারে বিক্রি হয়েছিল। কেননা গতবার আবহাওয়া প্রতিকূলে ছিল, অনেক ফুল মাঠেই নষ্ট হয়। এবার যদি আবহাওয়া এমন থাকে, তাহলে আসছে পহেলা জানুয়ারি, বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস, ২৬ মার্চ, পহেলা বৈশাখের বাজারে চাষিরা ভাল দামে ফুল বিক্রি করে লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস সামনে রেখে কৃষকরা বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন বেড়েছে। উৎপাদিত গাঁদা ফুলের দাম একটু কম জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য ফুলের বাজারমূল্য ঠিকঠাক আছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ঝিকরগাছায় ফুল বিক্রি ৪০০ ছাড়িয়ে ৫০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশা করছি। গদখালীর মাঠে গতবারের মতো এবারও টিউলিপ ও লিলিয়াম সৌন্দর্য ছড়াবে। এই অঞ্চলে ফুল চাষ আরও বেগবান করতে কৃষি অধিদফতর সব সময় কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ