অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বছরে ভুট্টা-গম মিলিয়ে সাড়ে ৫ কোটি টন শস্য রপ্তানি করে ইউক্রেন। ভুট্টা রপ্তানি করে প্রায় তিন কোটি টন। গম রপ্তানি হয় দুই কোটি থেকে আড়াই কোটি টন। তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে এবার এই বিপুল পরিমাণ শস্য উৎপাদন করতে পারবে কিনা সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

বিশ্বে সানফ্লাওয়ার (সূর্যমুখী) তেলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন। বিশ্বের সারা বছরের মোট চাহিদার ৪৫ শতাংশই পূরণ করে দেশটি। সেইসাথে ভুট্টা, গম আর সানফ্লাওয়ার তেলের বড় রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন। ভুট্টা প্রধানত ইউরোপ ও চীনে রপ্তানি করা হয়। ইউরোপের ভুট্টার চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ ভাগই পূরণ করে ইউক্রেন।

আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। বিশ্বকে সতর্ক করে বলেছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের চাষিরা গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে না পারায় বিশ্বে খাদ্য সরবরাহে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এই যুদ্ধ চলতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তায় ‘চরম অনিশ্চয়তা’ সৃষ্টির আশঙ্কাও প্রকাশ করেন সংস্থাটির ইউক্রেনীয় নির্বাহী পরিচালক ভ্লাদিস্লাভ রাশকোভান। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দ্রব্যমূল্য ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। অদূরভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেন সরকার গম, ভুট্টা, চিনি, লবণ ও মাংসসহ প্রধান কৃষিপণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।

প্রধানত ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের মতো এশিয়ার দেশগুলোই ইউক্রেনের গম ব্যবসায়ীদের বড় গ্রাহক। ইউক্রেনে আমরা ব্যবসা করছি প্রায় পাঁচ বছর। ২০১৬ সাল থেকে কিয়েভে আমাদের বৃহত্তর শাখা অফিসের মাধ্যমে ইউক্রেনের গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী তেল সংগ্রহ করে পোল্যান্ড, রাশিয়া, আফ্রিকায় আমাদের শাখা অফিসের মাধ্যমে রপ্তানি করে আসছি। মিলকর্প গ্রেইন ট্রেডিংয়ের সদর দপ্তর সুজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও ভুট্টা, গম, সানফ্লাওয়ার তেল রপ্তানি করে আমাদের প্রতিষ্ঠান।

শুধু আমার প্রতিষ্ঠানই নয়। মিলকর্পের মতো এমন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অসংখ্য বহুজাতিক খাদ্যশস্য কোম্পানি ব্যবসা করে ইউক্রেনে। গ্রাহকও সবার বিশ্বব্যাপী। গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতাদের মধ্যে আরও রয়েছে মিসর, মরক্কো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো।

গত বছরও সানফ্লাওয়ার তেল হঠাৎ সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের এই রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব সমুদ্রবন্দরই এখন রুশ বাহিনীর দখলে। পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে যুদ্ধ আরও কয়েক মাস স্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। এর মানে একটা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্য সরবরাহব্যবস্থা স্থগিতই থাকছে। ইউক্রেনে সাধারণত এপ্রিল-মে মাস নতুন ফসল লাগানোর মৌসুম। কিন্তু যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষকরা ফসল ফলাতে পারবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।

চলতি মাসের প্রথম দিকে (৯ মার্চ) দেশটির মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত একটি আইন পাশ হয়েছে। সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও পণ্য সরবরাহে অচলাবস্থার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা এখন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে পরিস্থিতি উন্নতির তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

সব মিলিয়ে সংকটে পড়েছে ইউক্রেনভিত্তিক ছোট-বড়-বহুজাতিক খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীরা। দানিউব নদীতে হাতেগোনা ছোট ছোট তিনটি বন্দর স্মাইল, রেনি এবং কিলিয়া এখনো চালু রয়েছে। কিন্তু সেখানেও সময়-অর্থ দুই-ই নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। দিগন্তছোঁয়া দীর্ঘ লাইন। দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে নদী পার হতে। স্থলপণ্য পরিবহণ ব্যবস্থাও দ্রুত ভেঙে পড়ছে। দুদিন আগেই মিকোলাইভ শহরের কয়েকটি ট্রেন স্টেশনে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। তবে, সারাবিশ্ব যুদ্ধ থামার অপেক্ষা করছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ