ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বন্যার আগেই কাটা যাবে আগাম আমন জাত বীনা-১১ ধান। ময়মনসিংহের সদর উপজেলার পীরগঞ্জ গ্রামে গেলে দেখা যাবে মাঠজুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে কাঁচা আমন ধান। এই ধান পাকতে ও ঘরে তুলতে মাসখানেক সময় লাগবে কৃষকের। কিন্তু এই মাঠের মধ্যে এক খণ্ড জমির ধান সম্পূর্ণ পেকে হলুদ হয়ে গেছে।

এটা আগাম আমন জাত বীনা-১১ ধান। এই ধানের চারা করতে ২০ থেকে ২২ দিন সময় লাগে। চারা তৈরির সময় বাদ দিলে বীনা-১১ চাষে সময় লাগে ৯০ দিন, যা অন্য জাতের আমনের চেয়ে এক মাস কম বলে জানিয়েছেন কৃষক মো. আবু সাইয়ীদ। তিনি বলেন, এই ধান চাষ করতে চারা তৈরি থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১১০ দিন সময় লাগে। দু-এক দিনের মধ্যেই এই ধান কেটে ঘরে তুলব।

বীনা ১১ ধানের বিষয়ে আরেক কৃষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, উচ্চফলনশীল জাতের হওয়ায় বীনা-১১ অন্য জাতের আমনের চেয়ে বিঘায় চার-পাঁচ মণ বেশি হয়। ধানের দানা লম্বা ও মাঝারি হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে বীনা-১১-এর বিশেষ গুণ হলো, বন্যা এই ধানের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। জলমগ্ন অবস্থায়ও এই ধানগাছ টিকে থাকে।

আরও পড়ুন: কফি চাষের জন্য কোন ধরনের জমি প্রয়োজন?

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বীনা) জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় ২০ লাখ হেক্টর জমির ধান কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছরও বন্যায় ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির আমন ফসল নষ্ট হয়েছে। গত বছর বন্যায় নষ্ট হয়েছিল ১ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমির আমন ফসল, যা দেশে সামগ্রিক ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অথচ আগাম জাতের বীনা-১১ চাষে বন্যার হাত থেকে এই ফসল অনেকটাই রক্ষা করা সম্ভব হতো।

সরকারের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বীজতলা কিংবা চারা রোপণের দু-তিন দিন পর ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত পানিতে ডুবে চারা গাছের ওপরের অংশ পচে গেলেও মূল গাছ আবার বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক ফলন দিয়ে থাকে। জলমগ্ন অবস্থায় প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ টন আর জলমগ্ন না হলে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া স্বল্প জীবনকাল হওয়ায় এই জাত চাষাবাদ করে সহজেই শস্য নিবিড়তা বাড়ানো সম্ভব। গত কয়েক বছরে এই আগাম জাতের আমনের আবাদ ক্রমেই বাড়ছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বীনা) মহাপরিচালক ও জাতটির উদ্ভাবক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আগের আমন জাতগুলোর জীবনকাল বেশি হওয়ায় উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা বছরে দুটির বেশি ফসল চাষ করতে পারতেন না। কিন্তু স্বল্প জীবনকালের বীনা-১১ চাষ করলে কৃষকেরা সহজেই বছরে একই জমিতে তিনটি ফসল চাষ করতে পারবেন।

তিনি বলেন, একজন কৃষক আগাম আমনের পর সরিষা বা পাটশাক অথবা রবি ফসল করে বোরো চাষ করতে পারবেন। তাছাড়া স্বল্প জীবনকালবিশিষ্ট এসব জাত আবাদ করে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকেরা দুই ফসলি জমিকে ইতিমধ্যে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করেছে।

বীনার মহাপরিচালক বলেন, আশ্বিন মাসের শেষের মধ্য থেকে এই ধান কাটা হয়। ফলে এ সময় ধানের খড় থেকে গোখাদ্যের চাহিদা মিটছে। কৃষক খড় বিক্রি করেও বাড়তি আয় করতে পারছেন। বীনা-১১ কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বর্তমানে সারা দেশে ১ হাজারেরও বেশি মাঠ প্রদর্শনী করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যেহেতু বন্যার আগেই কাটা যাবে আগাম আমন জাত বীনা-১১ তাই জাতটি কৃষক পর্যায়ে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ