আব্দুল বাতেন, রাজশাহী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠ দিয়ে হাঁটা দিলেই চোখে পরবে সোনালী রঙে ছেয়ে আছে ধান ক্ষেত। আর সেই ক্ষেতে কাঁচি চালাচ্ছেন কৃষকেরা। দলবেঁধে ধান কাটতে গিয়ে কোনো কেউ কেউ গান গাচ্ছেন, কেউ বা খোশগল্প করছেন।

এমনই উৎসবের মধ্যে দিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো মৌসুমের ধান কাটা চলছে। পাকা ধানের সোনালী দানা কৃষকের স্বপ্নপূরণে উঁকি দিচ্ছে। অপরদিকে আর ধান মাড়াই বাছাই ও সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে কৃষাণীরা।

অনেককে দেখা গেলো ধান মাড়াই-বাছাইয়ের জন্য উঠান পরিস্কারসহ ধোয়া-মোছায় ব্যস্ত থাকতে। মাঠে কৃষক আর উঠানে কৃষাণী বোরো ধান ঘরে তোলার সম্পূরকে এগিয়ে চলেছে। বছরের খোরাক মেটানোর পাশাপাশি এই ধান দিয়েই অন্যান্য খরচ মিটবে তাদের।

আর কিছুদিন পরে তো মাঠে মাঠে লেগে যাবে বোরো ধান কাটা, মাড়াইয়ের হিড়িক। দাম ভাল থাকায় কৃষকরা স্বপ্ন দেখছে আয়ের। আবার চৈত্রের শেষের দিকে মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে সেচ সাশ্রয়সহ উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরুপ ফলন হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে অনুকুল আবহাওয়া ও ধানের দাম ভাল থাকায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় তিন হাজার হেক্টর বেশী জমিতে আবাদ হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ৩শ’হেক্টর জমি। গত বছর বোরোর আবাদ হয়েছিল ৬৭ হাজার হেক্টর। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৮৮ হেক্টর (প্রায় ২৩ হাজার বিঘা) বেশী জমিতে আবাদ হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল বলে খ্যাত গোদাগাড়ি ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। জেলার বেশীরভাগ মাঠের ধান পাকতে শুরু করেছে।

ধান চাষীরা জানায়, এবারে ধানের দাম ভাল থাকায় মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ধান রোপন করেছে চাষিরা। মৌসুমের আগে ও পরেও বোরো চারা রোপন হয়েছে। এবারে এমন হবে এক ক্ষেতের ধান কাটছে, পাশের ক্ষেতে ধান পাকছে এবং আরেক ক্ষেতে ধানের শীষ বেরুচ্ছে।

তানোর উপজেলার বেলখড়িয়া গ্রামের মাইনুল ইসলাম টুলু বলেন, আবাদ ভাল হয়েছে। ক্ষেতে ৮০ ভাগ ক্ষেতের ধান পেকেছে। এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। তিনি জানান, ধানের শীষ দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভাল হবে। তবে দুশ্চিন্তায় ভূগছে শ্রমিক নিয়ে। তারা সিন্ডিকেট করে মুজুরী বাড়িয়ে দিয়েছে।

পবা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন প্রায় ক্ষেতের ধানই পাকতে শুরু করেছে। ভাল ভাবে ধান ঘরে তুলতে পারলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও ভাল হবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ধানের দাম ভালো থাকায় এবার বেশি জমিতে বোরো আবাদ করেছে চাষিরা। এখন পর্যন্ত আবাদ ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর উৎপাদনও ভালো হবে বলে আশা করছেন তারা।