আব্দুল বাতেন, রাজশাহী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ধান ক্ষেতের মাঠ সবুজে ছেয়ে আছে। বোরো ধানের ক্ষেতগুলোর আশপাশ দিয়ে হাঁটা দিলেই চোখে পরবে এ দৃশ্য।

ধানের দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি অনুকুল আবহাওয়া এ অঞ্চলের চাষিরা বোরো আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ফলে প্রতিবারই বাড়ছে চাষাবাদের পরিমাণ। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদরে চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৬ হাজার ২১২ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ৩শ’হেক্টর। গত বছর বোরোর আবাদ হয়েছিল ৬৭ হাজার হেক্টর। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৮৮ হেক্টর (প্রায় ২৩ হাজার বিঘা) বেশী জমিতে আবাদ হয়েছে।

বোরো চাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রাজশাহীর চাষিরা কয়েক বছর যাবত সেচ কম লাগে এ ধরনের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।

তবে রাজশাহী জেলাসহ এ অঞ্চলে প্রতিনিয়তই ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর (লেয়ার) নীচে নামছে। গভীর নলকূপগুলোতেও আগের মত আর পানি উঠছে না। এতে অনেক এলাকায় সেচের পানিও ঠিকমত না পাওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে। আবার সচেতনতার অভাবে বোরো ক্ষেতে পরিমিত পানির চেয়ে বেশী পানি দেয়া হচ্ছে। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের।

মাঠ ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম বোরো ধানে শীষ বেরুতে শুরু করেছে। জেলার মাঠে মাঠে চলছে বোরো ক্ষেতে যত্নের কাজ। কোন ক্ষেতে আগাছা পরিস্কার, কোন ক্ষেতে সেচ ও সার এবং কীটনাশক স্প্রে’র কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আবার কোন কোন মাঠে এখনো ধান রোপন চলছে।

পবার বিল নেপালপাড়ার কৃষক কর্ণহার বড়বিলা পানি ব্যবস্থাপনা এসোসিয়েশনের সভাপতি নূরুল আমিন সিদ্দিকী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, তিনি ৬ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন। গত বছর করেছিলেন সাড়ে ৩ বিঘা। বর্তমানে ধানের দাম ভালো থাকায় তিনি বেশি জমিতে বোরো আবাদ করছেন।

একই উপজেলার তেঘর গ্রামের আফাজ উদ্দিন সরকার এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, আবাদ ভাল হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষ বেরুবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরুপ ফলন হবে বলে তিনি জানান। আমন মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমণ (৪০ কেজি) ধান ১২/১৩শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গতবছর ওই সময় যার দাম ছিল ৮/৯শ টাকা। এবার দাম ভালো থাকায় জেলার বিভিন্ন এলাকার সব কৃষকই বেশি জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। এরফলে জমির লীজ মূল্য ও চারার দাম এবার বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর বোরো চাষের জন্য প্রতি বিঘা জমির লীজ মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা। এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭-৮ হাজার টাকায়।

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, বোরোর পরিবর্তে সেচ কম লাগে এধরনের আবাদের জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিদেরকে কয়েক বছর যাবত পরামর্শ দিয়ে আসছিল কৃষি বিভাগ। কিন্তু এবার হাওড় অঞ্চলে বন্যায় ধানের ক্ষতি হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বোরো চাষের ব্যাপারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে না।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ধানের দাম ভালো থাকায় এবার বেশি জমিতে বোরো আবাদ করেছে চাষিরা। এখন পর্যন্ত আবাদ ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর উৎপাদনও ভালো হবে বলে আশা করছেন তারা।