নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের খাঘা গ্রামের স্কুল শিক্ষক জুলফিকার আলী। ২০০৯ সাল থেকে ‘বল সুন্দরী’ বরই চাষ করছেন। সাড়ে ৭ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কুল চাষ বাজিমাত করেছেন।

২০০৯ সালে ১০০ চারা দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে ২৫০টি গাছ রয়েছে। প্রতিবছর এই গাছগুলোর পরিচর্যা ও জমির খরচ হয় প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, আর ফল বিক্রি করেন ৫ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

জুলফিকার আলী জেলার কাজীপুর উপজেলার বীর শুভগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি বর্তমানে তিনি একজন সফল বরই চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ৬৫ হাজার টাকায় সাড়ে ৭ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে কুল চাষ করে আসছি। প্রতি বছর জমির ভাড়া ও বাগান পরিচর্যায় প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। প্রথম দুই বছর খুব একটা লাভ করতে পারিনি। কারণ, প্রথম অবস্থায় বুঝতে পারিনি। আস্তে আস্তে এখন সব ঠিক হয়েছে।

পড়তে পারেন: লালপুরে চাষ হচ্ছে কাজুবাদাম

জুলফিকার আলী আরও বলেন, প্রতিটি গাছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি আপেল কুল ধরেছে। বাগানে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করছি। দামটাও বেশ ভালো পাচ্ছি। বরইগুলো দেখতে সুন্দর ও খেতেও খুব মিষ্টি। বাগান থেকে সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।

একই জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা ব্রিজ এলাকার কৃষক ফজলুল হক ভারত থেকে দেড় বছর আগে নতুন জাতের বরইয়ের চারা সংগ্রহ করেন। এই চারা ৩ বিঘা জমিতে রোপণ করেন তিনি। পরে এই চারা থেকে সুস্বাদু বরই এবং ফলন ভালো হওয়ায় গ্রামের অন্য কৃষকদেরও এই জাতের বরই চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

কৃষক ফজলুল হক বলেন, দেশে অনেক রকমের বরই পাওয়া যায়। আমি কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে সিডলেস বরই সম্পর্কে জেনে এই চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি। বর্তমানে আমার বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় বরই ঝুলছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজারমূল্য ভালো থাকায় লাভের আশাবাদী আমি। এছাড়া ফলের পাশাপাশি গাছের কলম তৈরি করে বিক্রির উদ্যোগও নিয়েছি।

পড়তে পারেন: কোটি টাকা লাভের আশায় ইউটিউব দেখে সৌদি খেজুরের চাষ

স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক জুলফিকার আলী ও ফজলুল হকের কুল চাষ দেখে এলাকার লোকজন উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই কুল চাষে এগিয়ে আসছেন। অনেকেই তাদের দেখে চাষ শুরু করেছেন। যে কেউ তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন।

বরই বাগানের শ্রমিক সজিব ও সোহেল বলেন, এই বাগান হওয়ায় এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনেকে এখন বরই বাগানে কাজ করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছেন। বাগানে বরই গাছের গোড়া পরিষ্কার, স্প্রে করা, সার দেওয়া, গাছ থেকে বরই পেড়ে বাজারে নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলার সদর উপজেলায় ৭৬, শাহজাদপুর ৫, উল্লাপাড়া ২, কাজিপুর ৩৮, রায়গঞ্জ ২৫, বেলকুচি ১৮, কামারখন্দ ৬, চৌহালী ৩ এবং তাড়াশ ২১ সহ মোট ১৯৪ হেক্টর জমিতে আপেল কুল, বল সুন্দরী ও বাড়ি কুল বরইগুলো চাষ হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হানিফ বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উন্নত জাতের আপেল কুলের চাষ হচ্ছে। জুলফিকার আলী ও ফজলুল হকসহ ২০/২৫ জন এখন অভিজ্ঞ কুল চাষি। তারা আপেল কুল চাষে সফলতা পেয়েছেন। আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। তাদের দেখে আরও মানুষ এই কাজে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ