নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সংকট মোকাবিলায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভূক্তিকরণ ক্যাটাগরিতে “বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২১” পেয়েছে “বনায়ন”।

গত রোববার (১৪ মার্চ, ২০২১) এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম। এবার পুরস্কারের তৃতীয় সংস্করণে ১৪টি প্রধান ক্যাটাগরি ও ১২টি সাব-ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

দেশে মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ সবুজায়ন নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি “বনায়ন” সহযোগী হিসেবে কাজ করছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-১৫), “লাইফ অন ল্যান্ড” এর অন্যতম সূচক।

প্রতি বছর “বনায়ন” প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ লাখ গাছের চারা সারাদেশে বিতরণ করা হয়ে থাকে। এমনকি করোনা মহামারির সময়েও “বনাqন”-এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। এ সময় “বনায়ন” ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করে।

গত ৪০ বছর ধরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ কোটিরও বেশি ফলজ, ওষুধি ও বৃক্ষ জাতীয় গাছ বিতরণ করা হয় যা থেকে প্রতিবছর ৩০ হাজারের বেশি মানুষ উপকৃত হয়। একটি স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর রিপোর্ট অনুসারে, “বনায়ন” প্রকল্প পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বনায়নসহযোগীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করছে।

সবুজায়নে অসাধারণ অবদান রাখায় “বনায়ন” কর্মসূচি চারবার “প্রাইম মিনিস্টার’স ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড” এবং এক বার “চিফ অ্যাডভাইজর ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড” লাভ করে। পাশাপাশি প্রতিবছর জেলা ও উপজেলা-ভিত্তিক ২০টির বেশি পুরস্কার cvq “বনায়ন” প্রকল্প। এছাড়া এন্টারপ্রাইজ এশিয়ার কাছ থেকে গ্রিন লিডারশিপ বা সবুজ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ব্যবসায়খাতে শীর্ষ পুরস্কারের একটি “এশিয়া রেসপন্সিবল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড” ও লাভ করে “বনায়ন” কর্মসূচি।

“বনায়ন” এর আওতায় লালন শাহ সেতু, হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লামা আলিকদম মহাসড়ক, রোহিঙ্গা ক্যাম্প, মিরিঞ্জা পয়েন্ট-লামা, কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক, জিকে প্রকল্প, যমুনা সেতু, কুষ্টিয়া বাইপাস সহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সবুজায়ন প্রকল্প রয়েছে।

দেশের ২ কোটি মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার করে : ইউনিসিএফ

আজ বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও ২২শে মার্চ সারাবিশ্বের ন্যায়  বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এই দিবসটি। বিবিএস ও ইউনিসিএফ এর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ এখনো আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, হেপাটাইটিস ও টাইফয়েডের মতো শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ সংক্রামক রোগ বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবেই হয়ে থাকে।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষজন নিরাপদ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। প্রায় ২৫ বছর আগে বাংলাদেশে প্রথম আর্সেনিক শনাক্ত হয় এবং এখন পর্যন্ত দেশের বেশ কিছু জেলায় অগভীর নলকূপে আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষণীয়।

নিরাপদ পানির সংকট মোকবিলায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘প্রবাহ’ স্থানীয়দের পানির সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিরাপদ পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করে। প্রায় এক যুগ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছে ‘প্রবাহ’। সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় ২০১৮ সালে ‘এশিয়া রেস্পন্সিবল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারেও ভূষিত হয় এই প্রকল্পটি।

প্ল্যান্টের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে পানি তোলার পর পানি থেকে আর্সেনিক, লোহা এবং ম্যাঙ্গানিজ অপসারণ করা হয়, এরপর পরিশোধিত পানি প্ল্যান্টের মূল ট্যাংকে পৌঁছায়, এভাবে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণের মাধ্যমে পানি পরিশোধন করা হয়। ফলে খুব সহজেই নিরাপদ পানি সংগ্রহ করতে পারেন সাধারণ মানুষ।

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১২ বছরের এই যাত্রায় ‘প্রবাহ’ দেশের সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে যেখানে সুপেয় পানি সংগ্রহের সুযোগও সীমিত। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ও নিরাপদ আগামীর নিশ্চয়তায় দেশের দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকা ও সেন্ট মার্টিনের মতো দ্বীপেও পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ‘প্রবাহ’।

২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত মোট ২০টি জেলায় ১১০টি প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫ লাখ ৬০ হাজার লিটারেরও বেশি পানি বিশুদ্ধকরণ ও সরবরাহ করে যাচ্ছে। ফলে দ্রুতই সংকটাপন্ন বিভিন্ন অঞ্চলে পানির সমস্যা কমে এসেছে এবং প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার এরও বেশি মানুষ এই বিশুদ্ধ পানি দ্বারা প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছে, যার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৩) ‘সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ‘প্রবাহ’।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ