আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী): রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় চলতি মৌসুমে অন্য বছরের তুলনায় আমের উৎপাদন কিছুটা কম। তার উপর কালবৈশাখীর ঝড়ে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকারি ফসল আমে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এতে যেসব আমচাষি বাগান চুক্তি অগ্রীম আম ক্রয় করেছেন তাঁরা চরম হতাশায় পড়েছেন।

জানা যায়, উপজেলা ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে বাগানে উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৬-৭ মেট্রিক টন। তারপর আবার বুধবার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে কালবৈশাখী তান্ডবে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই আম প্রতিকেজি ২-৩ টাকা দরে ক্রয় করে ট্রাক যোগে ঢকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস দাবি করছেন, বুধবার রাতে ঝড়ে ১ শতাংশ আম ঝড়ে গেছে। এদিকে ৫ শতাংশের হিসেব করে আনুমানিক প্রায় ২৫ কোটি টাকার আম ঝরে গেছে বলে চাষিরা দাবি করেন।

রাজশাহীকে আমের জন্য বিক্ষাত বলা হলেও মূলত: বাঘা ও চারঘাট উপজেলাকে আম প্রধান অঞ্চল বলা হয়। উপজেলায় খাদ্য শস্যের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে বর্তমানে আমই প্রধান। এই আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঘার আমের সু-খ্যাতি সবচেয়ে বেশি।

এ বিষয়ে উপজেলার মনিগ্রামের আম চাষি জিল্লুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, লিজ নিয়ে যে আমের চাষ করেছি। এতে যে পরিমান আম পড়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমার বাগানে প্রায় ৫ শতাংশের মতো আম ঝড়ে গেছে।
তবে এই আম প্রতিকেজি ২-৩ টাকা দরে ক্রয় করে ট্রাক যোগে ঢকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আম এক বছর ভাল আম হলে, অন্য বছর কম হয়। তারপরও পরপর দুই বছর প্রচুর পরিমান আম হওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় এবার কম হয়েছে। তবে এরপর দূর্যোগ আর না হলে ক্ষতি অনেকটা পুসে যাবে।

আমের কেজি ২ টাকা

সজিব ইসলাম,চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঝরে পড়া কড়ালি আম দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারের মোড়ে এই আম বিক্রি হতে দেখা যায়।

বৃহস্পতিবার (২২এপ্রিল ২০২১) সকালে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারের মোড়ে এই কড়ালি আম দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা ওসব আম কুড়িয়ে দুই টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছেন। তবুও ক্রেতার অভাবে এসব আম ভালো বিক্রি হচ্ছে না।

আম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈশাখের চড়া রোদে আমের বোঁটা নরম হয়ে যায়। এরপর একটু বাতাস হলেই ঝরে পড়ে গাছ থেকে। এই আম গ্রামের সাধারণ মানুষ কুড়িয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারের মোড়ে দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

উপজেলার মোহননগর গ্রামের আমবাগান মালিক শফিউল আলম বলেন, আমার আমবাগানে প্রতিটি গাছে ব্যাপক আম ধরেছে। হঠাৎ প্রখর রোদ ও একটু বাতাসে আম ঝরে যাচ্ছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা আম কুড়িয়ে দেড় থেকে দুই টাকা কেজিতে বিক্রি করছে।

উপজেলার ডাকরা এলাকার মুকিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বরাবর ঝরে পড়া কড়ালি আম কিনে ঢাকায় চালান করি। এই কড়ালি আম দেড় টাকা থেকে দুই টাকা দরে ক্রয় করছি।

একই এলাকার বিক্রেতা নবীর আলী বলেন, আমি বাগান পাহারা দিয়ে থাকি। মালিকরা মাচা তৈরি করার জন্য বলেছেন। সেই মোতাবেক কিছু কিছু বাগান পাহারা দেয়ার জন্য মাচা তৈরির কাজ শুরু করেছি। তবে এখন বাতাসে যে কড়ালি আম ঝরে পড়ছে, সেগুলো কুড়িয়ে বিক্রি করছি। বাগান মালিকরা এগুলোর টাকা নেয় না। দেড় থেকে দুই টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছি এসব আম।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই এ অঞ্চলে বৃষ্টি নেই। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাপমাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত খরার কারণে কিছুটা আমের গুটি ঝরছে।

বাগানের মাটি শুকিয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আচাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি আমাদের পরামর্শ নিয়ে চাষিরা লাভবান হবেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ